নিরাপদ মৃত্য হোক….

=============
প‌ত্রিকায় প্রকা‌শিত খবর “কর্মচারীদের মারধোরে হাসপাতালে জ্যেষ্ঠ এএসপির মৃত্যু” ।

আ‌নিসুল ক‌রিম না‌মের এ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ব‌বিদ্যালয় হ‌তে প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিভাগ হ‌তে শিক্ষালাভ ক‌রে ৩১ তম বি‌সিএ‌সে কৃতকার্য হ‌য়ে ব‌রিশাল মহানগর পু‌লি‌শে কর্মরত ছি‌লেন।

তার বাড়ী কাপা‌সিয়া, গাজীপু‌রে। তি‌নি এক সন্তা‌নের জনক। সোমবার সকা‌লে তা‌কে আদাবর মাইন্ড এইড হাসপাতা‌লে ভ‌র্তির কিছুক্ষণ পর সে মারা যায়।

প‌রিবা‌রের দাবী সে প‌রিবা‌রিক সমস্যা নি‌য়ে ভুগ‌লেও হাসপাতা‌লের লোকজন কর্তৃক তা‌কে মারা হ‌য়ে‌ছে। ঘটনার সি‌সি টি‌ভি ফু‌টে‌জেও এমন প্রমান পাওয়া গে‌ছে।

মৃত্যু অ‌মোঘ ও অবধা‌রিত। প্র‌তি‌টি জীব মা‌ত্রেই এর স্বাদ গ্রহণ কর‌তে হ‌বে নি‌শ্চিত। কিন্তু সেটা প্র‌ত্যে‌কেই অন্তত চায় আত্মীয় প‌রিজনের সহচ‌র্য্যে থে‌কে এক‌টি নিরাপদ মৃত্যু।

‌কিন্তু চি‌কিৎসা‌কে‌ন্দ্র কর্তৃক এ‌হেন মৃত্য, তারপরও তার বড় প‌রিচয় তি‌নি প্রশাসনের একজন গুরুত্বপূর্ণ প‌দে নি‌য়ো‌জিত কর্মকর্তা, তা‌কে য‌দি এভা‌বে সবাই জোটবদ্ধভা‌বে মারা হয় তাহ‌লে সাধারণ মানু‌ষের ভরষার স্থল আর থা‌কে কি?

মৃত্য হা মৃত্য, হ‌বে ত‌বে একজন সাধারণ মানুষ হিসা‌বে সক‌লেরই প্রত্যাশা নিরপদ মৃত্য, এ‌টি কি রাষ্ট্র নি‌শ্চিত কর‌তে পার‌বে না?

‌বিষয়‌টি এখ‌নি খ‌তি‌য়ে দে‌খে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। তা না হ‌লে কে কখন বা কে যে এ ঘৃন্য সামাজিক নিষ্পেষণের শিকার হবে তা আর কেউ বলতে পারবেনা।

ধ‌রেই নিলাম উ‌নি একজন মান‌সিক রু‌গী। তারপরও শারীরিক অসুস্থতার চেয়েও মানসিক অসুস্থ যারা, তাদের জন্য আরো সহানুভূ‌তিশীল হওয়া কি আরো বে‌শি দরকার নয়?

আমা‌রা কেন যেন এতোটাই উচ্ছৃঙ্খল যে, মানসিক অসুস্থদের‌কেও যেন মো‌টেই সহ্য করতে একদমই নারাজ। মানসিক বিকারগ্রস্তদেরকেও পিটিয়ে কিংবা প্রহার করে অথবা আগুনে পুড়িয়ে মারতে এতটুকু দ্বীধাগ্রস্থ নই আমরা।

আসলে গলদটা বা সমস্যাটা কোথায়?

গলদটা আস‌লে প্রথ‌মেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়। পুঁজিবাদ‌ি শিক্ষাসহ সকল ক্ষেত্রে চল‌ছে এখন এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা। এর ফ‌লে সমা‌জের মানু‌ষের মান‌বিয় ও মানবিকতাকে গ্রাস করে ফেলছে গোগ্রা‌সে সব‌কিছু।

ভোগবাদী সমাজে অ‌র্থ বি‌ত্তের প্র‌তি‌ যো‌গিতায় নৈতিকতা‌কে বিসর্জন দিয়ে ভোগ ও অর্থ আয়ের দি‌কে সবাই ঝুঁকে পড়েছে হুম‌রি খে‌য়ে। এই অর্থ আয়ের জন্য ব্যবহার করা হ‌চ্ছে ধর্ম ও প্রযুক্তি‌কে।

মানুষের নী‌তি, নৈ‌তিকতা, বোধ ও মননের জায়গাটায় শিক্ষা ও সংস্কৃতির বাণী সঠিকভাবে পৌঁছাতে পারছেনা। আর সে‌টি তেমন স‌ঠিক ভা‌বে কাজও কর‌ছেনা অ‌নেক ক্ষে‌ত্রেই। দিনদিন মানুষের সুপ্রবৃত্তি গু‌লো বিলোপ ঘটছে আর কুপ্রবৃ‌ত্তির বিস্তৃ‌তি ঘট‌ছে লা‌ফি‌য়ে লা‌ফি‌য়ে।

আবার শিক্ষা জা‌তির মেরুদন্ড হ‌লেও শিকাষাল‌য়ে শিক্ষকদেরও ছাত্রের মানসিক অবস্থা বিচার বি‌বেচনা ও করে ছাত্রের সঙ্গে কোমল- মানবিয় আচার ব্যবহার করার মত শিক্ষকের এখন বড়ই অভাব।

প্রায়সময়ই শিক্ষকেরা লঘু অপরাধে স্টুডেন্টদের উপর মারমুখী হয়ে ওঠে। তা‌দের‌কে নানা ভা‌বে ব্যবহারও করা হ‌য়ে থা‌কে বি‌ভিন্ন অযুহা‌তে। নি‌জের অপারগতাকে চা‌পি‌য়ে অ‌নেক সময় স্টুডেন্টকে অপরাধের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে যে আচরণে লিপ্ত হন, তার মধ্যে প্রজ্ঞা ও সহানুভূতির চিহ্নর লেশমাত্রও থাকেনা।

এছাড়াও প‌রিবা‌রে আমা‌দের দেশের মানুষ গু‌লো শিশুদের সঙ্গে কেমন আচার ব্যবহার করতে হবে ‌সেটার বিষ‌য়েও অন‌ভিজ্ঞ বা কেহ কেহ জানেওনা।

বড়রা, শিক্ষক ও ছাত্রের সঙ্গে সঠিক আচরণ করেননা; বাবা-মাও সন্তানের নির্ভরতার আশ্রয়স্থল হয়ে উঠতে পারেন নাই। ফ‌লে সন্তানগণও বৃদ্ধ বাবা-মায়ের মনস্তাত্ত্বিক অসহায়তা হৃদয়ঙ্গম করে‌তে পা‌রেন না এবং প্রতিবেশীর প্র‌তি পারস্পরিক সৌহার্দ্য পূর্ণ সম্পর্কস্থাপনে উৎসাহীও হয় না।

সবাই কেবল ব্যস্ত আছে নি‌জে‌কে নি‌য়ে। যে কোন ভা‌বেই হোন না কেন, প্র‌য়োজ‌নে দুর্নীতি ক‌রে হ‌লেও এমন‌কি ধনীক শ্রেণীর তোষামোদ ক‌রে হ‌লেও যেন অর্থ বি‌ত্তের মা‌লিক হওয়া প্র‌তি‌যো‌গিতায় ব্যস্ত।

ধর্মীয় ওয়াজ-মাহফিল ও ধর্মীয় প্র‌তিষ্ঠা‌নে যথাযথ ধর্মীয় জ্ঞানের ব্যপক চর্চার অভাব ছাড়াও বি‌ভিন্ন নেতিবাচক চর্চা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে শুরু করে রা‌ষ্ট্রের, সমাজের সর্বস্ত‌রে।

ফ‌লে বে‌শি বে‌শি ছড়া‌চ্ছে নে‌তিবাচক দিক । সমাজ বা রা‌ষ্ট্রের কিছু স্বার্থা‌ ন্বে‌শি মানুষ অসহিষ্ণু ও ধর্মান্ধ হয়ে উঠছে। ঘট‌ছে মানবতার চরম বিপর্যয় । আর এগু‌লোর সহজ শিকার হ‌চ্ছে নারী, শিশু ও মানসিক ভাবে বিকারগ্রস্থ অসুস্থ মানুষ।

তাই কেবলমাত্র স্টুডেন্টদের নয় দরকার সমাজ ও রা‌ষ্ট্রের সকল পর্যা‌য়ে যথাযথ কাউন্সিলিং । শিক্ষকদের‌কেও কাউন্সিলিং প্রয়োজন। পাশাপাশি চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, পুলিশসহ সকল প্রজাত‌স্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারী এবং অন্যান্য ছোট বড় সকল পেশা জীবীদেরও ঘনঘন ও যথাযথ কাউন্সিলিং খুবই দরকার ।

সাম্প্রতিক সম‌য়ে বেশ কিছু মৃত্যু ও হত্যা মন কে বারবার ব্যা‌থিত ও মর্মাহত কর‌ছে। বি‌শেষ ক‌রে নোয়া খালীর বেগমগঞ্জে বিবস্ত্র নারীকে নির্যাতন; পাটগ্রামে ধর্ম অবমাননার দোহাই দিয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ জুয়েলকে পিটিয়ে অতপর পুড়িয়ে হত্যা; এস‌কে সিনহা হত্যা, সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে রায়হান উদ্দিন আহমদকে তুলে নিয়ে নির্যাতনে হত্যা; এই মৃত্যুগুলো বারবার ম‌নে ভয় ও আতঙ্ক গ্রস্থ কর‌ছে। এখন শুধু এমনটাই চাওয়া আর তা হলো, শান্তিপূর্ণ ও মর্যাদার সঙ্গে যেন মৃত্যু হয়। ‌স্বাভা‌বিক ও নিরাপদ মৃত্যু হোক।

লেখকঃ সুপ্তকূ‌ঁড়ি
(ছড়াকার, কবি, কলা‌মিস্ট, উন্নয়ন কর্মী)

ফেসবুকে লাইক দিন

আর্কাইভ

মে ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« এপ্রিল    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১

সর্বমোট ভিজিটর

counter
এই সাইটের কোন লেখা অনুমতি ছাড়া কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ!
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।