ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মহানবী (সা.)-এর ব্যবহার

ইসলাম ডেস্ক, আমাদের ভোলা।

‘ওয়া ইন্নাকা লাআলা খুলুকিন আজিম’ অর্থাৎ, নিশ্চয় হে নবী! তুমি মহান চরিত্রের ওপরে অধিষ্ঠিত (সূরা কলম, আয়াত ৪)। মহানবী (সা.) নিজ স্বার্থে কোনো প্রতিশোধ নিতেন না বরং শত্রু এবং বিধর্মীদের সঙ্গেও উত্তম ব্যবহার করেছেন। মহানবী (সা.) তার উম্মতকেও এ নির্দেশই দিয়েছেন যে, তারাও যেন ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবার সঙ্গে উত্তম আচরণ করে।

হজরত আসমা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘মহানবীর (সা.) যুগে আমার অমুসলিম মা (আবু বকরের স্ত্রী) আমার কাছে এলেন। আমি মহানবীকে (সা.) জিজ্ঞেস করলাম- আমি কি তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করব? তিনি (সা.) বললেন, হ্যাঁ।’ (বোখারি)। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘এক বেদুঈন মসজিদে পেশাব করল। লোকেরা উঠে তাকে মারার জন্য তার দিকে গেল। মহানবী (সা.) বললেন, তার পেশাব বন্ধ করো না। তারপর তিনি (সা.) এক বালাতি পানি আনলেন এবং পানি পেশাবের ওপর ঢেলে দেয়া হল।’ (বোখারি, কিতাবুল আদব)।

মহানবী (সা.)-এর আদর্শ এতটাই অতুলনীয় ছিল যে, তিনি ইহুদির লাশকেও সম্মান দেখিয়েছেন। হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, একবার এক ইহুদির লাশ বিশ্বনবী (সা.)-এর সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল আর এতে মহানবী (সা.) সেই লাশের সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে গেলেন। পাশ থেকে হজরত জাবের (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এটি তো ইহুদির লাশ। এতে আল্লাহর রাসূল উত্তর দিয়েছিলন, সে কি মানুষ নয়? (বোখারি।) যে নবী এক ইহুদির লাশকে সম্মান জানানোর জন্য তার সাথীদের নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন সেই নবীর উম্মতের পক্ষে কীভাবে সম্ভব শুধু ধর্মীয় মতপার্থক্যের কারণে কারও ওপর অন্যায় অত্যাচার করা।

হজরত সুফিয়ান ইবনে সালিম (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মনে রেখ যদি কোনো মুসলমান অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালায়, তার অধিকার খর্ব করে, তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়, তাহলে কেয়ামতের দিন আমি আল্লাহর আদালতে তার বিরুদ্ধে অমুসলিম নাগরিকের পক্ষ অবলম্বন করব।’ (আবু দাউদ।) হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোনো অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন’ (মুসনাদে আহমদ)। এছাড়া মহানবী (সা.) এটিও বলেছেন, ‘তোমরা মজলুমের বদদোয়া থেকে বেঁচে থেক, যদিও সে কাফির হয়। তার মাঝখানে আর আল্লাহর মাঝখানে কোনো পর্দা নেই।’ (মুসনাদে আহমদ)।

এছাড়া মহানবী (সা.) এটিও বলেছেন, ‘তোমরা মজলুমের বদদোয়া থেকে বেঁচে থেক, যদিও সে কাফির হয়। তার মাঝখানে আর আল্লাহর মাঝখানে কোনো পর্দা নেই।’ (মুসনাদে আহমদ)।

এছাড়া আমরা লক্ষ করি মানবসেবায় আত্মনিয়োগকারী ব্যক্তির প্রতিও মহানবী (সা.) শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতেন ও তাদের খেয়াল রাখতেন। একবার তাঈ গোত্রের লোকেরা মহানবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। এতে তাদের কিছু সংখ্যক লোক বন্দি হয়ে এসেছিল। তাদের মধ্যে আরবের প্রসিদ্ধ দাতা হাতেমের এক মেয়েও ছিল। এ কথা জানতে পেরে মহানবী (সা.) তার সঙ্গে অত্যন্ত সম্মানজনক ব্যবহার করলেন এবং তার অনুরোধে তার গোত্রের শাস্তি ক্ষমা করে দিলেন।’ (সিরাত হালবিয়া, ৩য় খণ্ড, পৃ.-২২৭)।

আমরা যদি সেই সময়ের ঘটনা লক্ষ করি যখন মক্কার লোকেরা মহানবী (সা.)-এর কোনো কথাই শুনতে চাচ্ছিল না, তখন তিনি (সা.) তায়েফের দিকে দৃষ্টি দিলেন। যখন তিনি (সা.) তায়েফ পৌঁছলেন, তখন সেখানকার নেতারা তার সঙ্গে দেখা করার জন্য আসতে লাগল। কিন্তু কেউই সত্য গ্রহণ করতে রাজি হল না। সাধারণ লোকেরাও তাদের নেতাদেরই অনুসরণ করল এবং খোদার বাণীর প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করতে লাগল। পরিশেষে তারা সব ভবঘুরে ছেলেদের একত্রিত করল। তারা প্রত্যেকেই ঝোলা ভর্তি পাথরের টুকরা নিল। তারা নির্মমভাবে মহানবীর (সা.) ওপর পাথর ছুড়ে মারল। অবিশ্রান্তভাবে পাথর মারতে মারতে মহানবী (সা.) কে শহর থেকে বাইরে নিয়ে গেল। রাসূলের দুটি পা রক্তাক্ত হয়ে উঠল। এ লোকগুলো যখন তার পিছু পিছু ধাওয়া করছিল, তখন তিনি এই ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছিলেন যে, আল্লাহর গজব না আবার তাদের ওপর পড়ে। তিনি আকাশের দিকে মুখ তুলে দেখছিলেন এবং কাতর হয়ে প্রার্থনা করছিলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি এদেরকে ক্ষমা করে দাও! কেননা এরা জানে না, এরা কী করছে।’ একটু ভেবে দেখুন, আঘাতে জর্জরিত, লোকদের তাড়া খেয়ে তার শরীরে চলার মতো আর শক্তি ছিল না। এত কিছুর পরও তিনি (সা.) তাদের অভিশাপ দেননি বরং তাদের জন্য দোয়াই করেছেন। এমনই ছিল মানবদরদি শ্রেষ্ঠ নবীর আদর্শ।

লেখক : গবেষক

ফেসবুকে লাইক দিন

আর্কাইভ

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  

সর্বমোট ভিজিটর

counter
এই সাইটের কোন লেখা অনুমতি ছাড়া কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ!
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।