জীবনভর সমাজসেবা করে কঠিন মামলার মুখোমুখি সমাজসেবী মিয়া মোহাম্মদ ইউনুস

বিশেষ প্রতিনিধি ॥
ভোলার সর্বজন স্বীকৃত সমাজসেবী আলহাজ্ব মিয়া মোহাম্মদ ইউনুস ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দেয়া ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়ম সংক্রান্ত এক কঠিন মামলার সম্মুখিন। ভোলার সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতা মোশারেফ হোসেন শাহজাহানের নেতৃত্বে ২০০৪-০৫ সালে ভোলা সদর উপজেলাকে ‘কুঁড়েঘর মুক্ত’ করার আন্দোলনে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যাকাত বোর্ডের দেয়া ৫০ লাখ টাকার ক্ষমতার অপব্যবহার ও অকৃতদার বিষয়ক মামলা বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। ৮২ বছর বয়সে অকৃতদার আজীবন সমাজসেবী মিয়া মোহাম্মদ ইউনুস এখন প্রতিটি মুহূর্ত কঠিন মামলা মাথায় নিয়ে বিব্রতকর জীবন-যাপন করছেন।
জানা গেছে, এ মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন আজীবন কারাদন্ড-প্রাপ্ত মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা দেলোয়ার হোসেন এমপি, একসময়ের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ইসলামী প্রোগ্রামের উপস্থাপক ও আলোচক মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ও সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর মরহুম মোশারফ হোসেন শাজাহান প্রমূখ। গত ২৮ ডিসেম্বরে এ মামলার তারিখ ছিল, পিছিয়ে আগামী ১১ জানুয়ারি পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রকাশ: ২০০৪-৫ সালে ভোলা সদর উপজেলাকে ‘কুঁড়েঘর মুক্ত’ করার জন্য তৎকালীন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মোশারফ হোসেন শাহজাহানের নেতৃত্বে বন্ধুজন পরিষদের সহযোগিতায় সামাজিক আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত ভোলার বহু সামাজিক সংস্কার ও সেবামূলক কাজে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন জাতীয় বন্ধুজন পরিষদের নেতৃত্বে এক সময় ভোলাকে নিরক্ষরতামুক্ত করা হয় পরে কুঁড়েঘর মুক্ত করার লক্ষ্যে এ আন্দোলন পরিচালিত হয়। মরহুম মোশারেফ হোসেন শাহজাহানের সামাজিক কর্মকান্ডের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী (মেজ বন্ধু) ভোলার নাদের মিয়া বাড়ির সন্তান মরহুম মাওলানা মমতাজুল করিমের পুত্র মিয়া মোহাম্মদ ইউনুস। বন্ধুজনের প্রধান সম্পাদক হিসেবে অন্য অনেক জনকল্যাণমূলক ও সেবা কার্যক্রমের মতো এ আন্দোলনের নেতৃত্বেও ছিলেন তিনি। এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ভোলা সদরের হতদরিদ্র মানুষদের সমস্ত কুঁড়েঘরের তালিকা প্রণয়ন করা হয়।
ইউনিয়ন ভিত্তিক পর্যায়ক্রমে বিনামূল্যে সকল কুঁড়েঘর এর স্থলে টিনের ঘর তৈরি করে দেয়া হয়। প্রতিটি ঘরের জন্য ৫০০০ টাকার টিন ক্রয় করে স্থানীয়ভাবে বন্ধুজনের উদ্যোগে কাঠ এবং অন্যান্য সহযোগিতা ও খরচ নির্বাহের মাধ্যমে ভোলায় সাত হাজারের বেশি কুঁড়েঘরকে টিনের ঘরে রূপান্তর করা হয়েছিল। ৭০০০ এর কুঁড়েঘরকে টিনের ঘরে পরিণত করতে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। জাতীয় বন্ধুজন পরিষদের নিজস্ব তহবিল থেকে কিছু টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া কুয়েত ভিত্তিক ইসলামিক এনজিও সংস্থা, ইউএনডিপি ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন যাকাত বোর্ডের ৫০ লক্ষ টাকা যাকাত বোর্ডের জেলা সভাপতি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে কুঁড়েঘর মুক্ত আন্দোলনের জন্য দেয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে ঢাকায় এলজিইডি ভবন মিলনায়তনে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
যেখানে মন্ত্রী সচিবসহ দেশের গুণী ব্যক্তিরা এ কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেছিল। পরবর্তীতে এ কার্যক্রম সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন হওয়ার পরে জাতীয়ভাবে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বিদ্রোহ মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে এ কর্মসূচির ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। জাতীয় বন্ধুজন পরিষদ এর আগেও ভোলা সদর উপজেলারকে নিরক্ষর মুক্ত করণ, এমভি সামিয়া লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত শত শত মানুষের গলিত লাশ দাফন, ভোলার মানুষের মধ্যে বৃক্ষরোপণ হাঁস-মুরগির খামারসহ বিভিন্ন কল্যাণ ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে সকল মানুষের কাছে প্রশংসা পেয়েছিল।
জাতীয়ভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে সেবা কার্যক্রমের স্বীকৃতি সূচক প্রশংসাপত্র অর্জন করেছিল। আর এইসব কার্যক্রমের মূল নেতা ছিলেন মরহুম মোশারফ হোসেন শাজাহান আর বাস্তবে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছেন বন্ধুজনের প্রধান সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ ইউনুস।
মিয়া মোহাম্মদ ইউনুস ভোলার সামাজিক সেবা ও কল্যাণ কাজের একটি বটবৃক্ষ। অকৃতদার এ মানুষটি নিজের সুখ শান্তি ঘর সংসার তুচ্ছ করে সারাটি জীবন মানুষের কল্যাণ ও সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। তার অসংখ্য সকল সামাজিক কীর্তিও মধ্যে ভোলা ডায়াবেটিক সমিতি ও ডায়াবেটিক কমপ্লেক্স হাসপাতাল, ভোলা খলিফাপট্টি ফেরদৌস মসজিদ অন্যতম। এছাড়াও তিনি নেতৃত্ব দিয়ে ভোলা সদরে ৭০০০-এর কুঁড়ের শতাধিক মসজিদকে কুয়েতি সংস্থার মাধ্যমে আধুনিক দৃষ্টিনন্দন ভবনে পরিণত করেছেন।
দুর্ভাগ্যবশত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ যাকাতের টাকা বন্টন ও অনিয়ম বিষয়ে একটি দুর্নীতি মামলা করা হয়। এ মামলার অন্যান্য আসামিরা হচ্ছেন তৎকালীন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী মোশারফ হোসেন শাজাহান, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী এমপি, যাকাত বোর্ডের সদস্য মাওলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
দুর্ভাগ্যবশত ভোলায় কুঁড়েঘর মুক্তি আন্দোলনে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যাকাত বোর্ড থেকে ১০০০ কুঁড়ে ঘরের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা দেয়া হয়েছিল। অথচ যথাযথভাবেই এ টাকা ব্যয় করে ব্যয়ের ভাউচার ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভোলা জেলা যাকাত কমিটির প্রধান ও জেলা প্রশাসকের দপ্তরে জমা দেয়া হয়।
সারা জীবন সামাজিক কর্মকান্ড করে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করা মানুষ আলহাজ্ব মিয়া মোহাম্মদ ইউনুস এখন এ ধরনের একটি কঠিন মামলার সম্মুখিন হয়ে বিব্রতকর জীবন যাপন করছেন। এ কাজের সফলতা ভোলার প্রতিটি মানুষ ভাল করে জানে। এ ধরনের একটি সামাজিক সংস্কারমূলক কাজে নেতৃত্ব দিয়ে যদি কাউকে হেনস্থা হতে হয়, শেষ জীবনে এসে এ ধরনের মামলার মুখোমুখি হয়ে আশঙ্কাজনক জীবন-যাপন করতে হয় তার চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। তাই ভোলার সকল মানুষের এবং দেশের সকল বিবেকবান ও সচেতন মানুষের পক্ষ থেকে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে একটাই দাবি এই কঠিন ও বাজে ধরনের মামলা থেকে নিবেদিতপ্রাণ সমাজকর্মী আলহাজ্ব মিয়া মুহাম্মদ ইউনূসকে বাদ দেয়া হোক। ইতোমধ্যেই ভোলার বিভিন্ন মহল থেকে এ দাবি সোচ্চার হচ্ছে বলে জানা গেছে।


 

ফেসবুকে লাইক দিন

আর্কাইভ

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  

সর্বমোট ভিজিটর

counter
এই সাইটের কোন লেখা অনুমতি ছাড়া কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ!
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।