হার্ড ইমিউনিটি কি

==============
অনেকেই বলছেন হার্ড ইমিউনিটির কথা। আসলে হার্ড ইমিউনিটি কি?
যারা একবার ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তাদের মধ্যে ঐ ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়।
এভাবে মানুষ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে থাকলে এক সময় বড় সংখ্যক মানুষের মধ্যে ভাইরাসের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। যার কারণে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি সু রক্ষা বলয় তৈরি হয় এবং ওই রোগ টির সংক্রমণ থেমে যায়। সাধারণ ভাবে এ পর্যায়কে হার্ড ইমিউনিটি বলা যায়।
করোনাভাইরাসের হার্ড ইমিউনিটি:
করোনাভাইরাসের যেহেতু এখনো কোন প্রতিষেধক বা টিকা বাজারে আসেনি। ফলে টিকা প্রদান করে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করা এখনো সময় সাপেক্ষ একটি বিষয়।
যদিও বিভিন্ন দেশের আবিষ্কৃত বেশ কয়েকটি টিকা বা ভ্যাকসিন এখন বিভিন্ন ধাপে ট্রায়াল পর্যায়ে আছে। রাশিয়া এরই মধ্যে একটি ভ্যাক সিনের চূড়ান্ত অনুমোদনও দিয়েছে, যদিও এগুলো বাজারে আসতে আরো সময় লেগে যাবে । তাহলে এটি মোকাবেলায় হার্ড ইমিউনিটি কিভাবে কাজ করবে?
কেহ কেহ বলছেন, করোনা ভাইরা সের ক্ষেত্রে হার্ড ইমিউনিটি কাজ করাটা কঠিন। কারণ, করোনা ভাই রাসের বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তুলতে হলে ৯০ ভাগের বেশি সংখ্যক মানুষ এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হতে হবে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এটা এখনো স্বীকৃত কোন পদ্ধতি নয়। তবে অনেকে মনে করেন যে এটা একটা উপায় হতেও পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোন ব্যক্তি আড়াই জন ব্যক্তিকে আক্রান্ত করতে পারে।
করোনাভাইরাসে হার্ড ইমিউনিটি হতে হলে অন্তত ৯০ভাগ মানুষ সংক্রমিত হতে হবে। অর্থাৎ প্রতি ১০ জনে ৯ জন আক্রান্ত হতে হবে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হার্ড ইমিউনিটি হতে হলে যদি এখানে ১৭ কোটি মানুষ থাকে তাহলে প্রায় ১৬ কোটি মানুষকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে হবে।
১৬কোটি মানুষ আক্রান্ত হলে এদের মধ্যে যদি ০.০০১ ভাগ মানুষেরও হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, তাহলে যে বিশাল সংখ্যক মানুষের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার হবে। বাংলা দেশের বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বাস্ত বতায় সেটা করা অসম্ভব ।এ কারণেই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে মারাত্মক হারে।
১৪ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫২০ জন। যদিও প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা এর চাইতে অনেক অনেক বেশি, সেরকমএকটি জোর ধারণা আছে অনেকেরই মধ্যে। কিন্তু কোনভাবেই সেটা ১৬ কোটি নয় নিঃসন্দেহে। বাংলাদেশে হার্ড ইমিউনিটি তত্ত্বের একেবারেই বিরোধী কারণ বিশাল সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হলে তাদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য যে ব্যবস্থা থাকা দরকার তা বাংলা দেশের নেই।
বাংলাদেশে বর্তমানে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে যদি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া যেতো, কোয়ারেন্টিন ভালভাবে কার্যকর করা যেতো, বিমান বন্ধ করা যেতো, দেশের বাইরে থেকে আক্রান্ত মানুষ বাংলাদেশে আসা বন্ধ হতো তাহলে অবস্থা এমনটা হতো না।
হার্ড ইমিউনিটিতে কি আসলেই সমাধান? অনেকে বলেন হার্ড ইমিউনিটি ‘এটা কোনও অ্যাপ্রোচ নয়, সিম্পলি আনএথিকাল।’ হার্ড ইমিউনিটি কেবলমাত্র ভ্যাকসিন দিয়ে সম্ভব হবে। কিন্তু সেটা বহুদূর, বহু বছর বাকি।
আমাদের দেশে যেভাবে হার্ড ইমিউনিটির কথা বলা হচ্ছে সেটা খুবই অনৈতিক। একজন মানুষকে মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে রেখে বাকিদের ইমিউন করার চিন্তা কোনও আইডিয়া-ই হতে পারে না।’.
অনেকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘অনেক বেশি মানুষের এই মৃত্যুঝুঁকি নেওয়া যাবে না। তাই হার্ড ইমিউনিটিতে পৌঁছানোর জন্য বিপুল সংখ্যক মানুষের আক্রান্ত হওয়াকে আমরা মেনে নিতে পারি না।’
একইভাবে করোনা মহামারি প্রতিরোধে হার্ড ইমিউনটির চিন্তা করা অনৈতিক বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসিস। তিনি বলেন, ‘হার্ড ইমিউনিটির এ দৃষ্টিভঙ্গি নৈতিকভাবে সমস্যাযুক্ত। বৈশ্বিক মহামারি দূরের কথা, জনস্বাস্থ্যের ইতিহাসে কোনও রোগের প্রভাব ঠেকাতে হার্ড ইমিউনিটি ব্যবহার করা হয়নি।’
লেখকঃ
রফিকুল ইসলাম সরকার (সুপ্তকূঁড়ি)
(ছড়াকার, কবি, কলামিস্ট, উন্নয়ন কর্মী)