ভোলায় হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা।
স্টাফ রিপোটার।
ভোলা সদর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য যেন বেড়েই চলছে। হাসপাতালের দেয়ালে দালালমুক্ত সাইনবোর্ড থাকলেও দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে হয়রানীর শিকার হচ্ছে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা। এসব দালালের উৎপাতে হাসপাতালে আসা গরিব রোগীদের ভোগান্তি এখন চরমে। মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ভোলায় ২০ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার একমাত্র ভরসা ভোলা সদর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালটি। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটিতে প্রতিদিন দূর-দুরান্ত থেকে এসে ৩ শ’ থেকে ৫শ’ রোগী চিকিৎসা নেন।পর্যাপ্ত জনবল ও ডাক্তার না থাকায় অতিরিক্ত রোগী সামাল দিতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এসব সংকটকে কাজে লাগিয়ে পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ দালাল চক্র। এসব দালাল চক্রের সাথে জড়িত বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের স্টাফরা, হাসপাতাল সংলগ্ন র্ফামেসি ব্যাবসায়ী ও বেসরকারি এ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীরা ।
ভোলা সদরে ৩০ এর অধিক বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক রয়েছে।হাসপাতালটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের দালালদের দখলে থাকে। হাসপাতালে রোগী ভর্তি হলেই হাসপাতালের স্টাফ পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার স্লিপ রোগীর হাত থেকে নিয়ে রোগীদেরকে দালালদের পছন্দমত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করাতে বাধ্য করেন। যদি রোগীরা দালালদের কথা না শুনেন তাহলে তাদের ভাগ্যে জোটে অশোভন ব্যবহার। হাসপাতাল কেন্দ্রিক অন্নত ৩০ জন দালাল সব সময় সক্রিয় থাকে। দালালদের আরেকটি কাজ হল হাসপাতালের স্টাফ পরিচয় দিয়ে তারা রোগীদের কাছ থেকে প্রেসকিপশন ছিনেয়ে নিয়ে কৌশলে নির্ধারিত দোকান থেকে ওষুধ কিনতে বাধ্য করে। ওষুধ কিনতে অস্বীকৃতি জানালে দালালদের দুরব্যবহারের শিকার হন সাধারন রোগীরা।
হাসপাতালে র্কমরত বেশিরভাগ এম্বুলেন্স চালক প্রাইভেট এম্বুলেন্স ব্যবসার সাথে জড়িত। অনেক চালকেরই কয়েকটি করে এম্বুলেন্স রয়েছে।সরকারি অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট অথবা ব্যস্ত দেখিয়ে রোগীদের কে বেসরকারি এম্বুলেন্স ভাড়া করতে বাধ্য করেন তারা। বেশিরভাগ বেসরকারি এম্বুলেন্স চালকদের নেই কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স। অনেক এম্বুলেন্স ফিটনেসবিহীন অবস্থায় সড়কে চলাচল করছে।
হাসপাতালে রোগীকে রক্ত দিতে আসা ভোলার আলীনগর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো গিয়াসউদ্দিন বলেন, হাসপাতালে থাকা তার এক রোগীর জন্য দুপুর ১টায় রক্ত দেওয়ার জন্য প্যাথলজী বিভাগের দায়িত্বরতরা অফিস সময় শেষ বলে তাকে বেসরকারি ক্লিনিকে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে সরকারি হাসপাতালের টেস্টের খরচ ২৫০ টাকার পরিবর্তে ক্লিনিকে গিয়ে ১৪০০ টাকা ব্যয়ে টেস্ট করান তিনি। দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে আসা আরও কয়েক রোগী একই অভিযোগ করেন।
অপর এক রোগীর স্বজন বশির আহমেদ জানান, কেবিন ব্যবস্থা করে বলে দেবে বলে কৌশলে প্রেসক্রিপশন ছিনিয়ে নিয়ে তার দোকান থেকে ওষুধ এনে আমার কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়েছে।
র্সাজারী ওয়াডে র্ভতি রোগি নুরুল আমিন বলেন আমি সড়ক র্দূঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। আমি হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসক আমাকে এক্সরে লিখে দেন।কিছু সময় পরেই কিছু লোক এসে একেকজন তাদের ইচ্ছামত ডায়গনসটিক সেন্টারে যাবার জন্য জোরাজুরি শুরু করে।
হাসপাতালে দালালদের প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার সিরাজুল ইসলাম বলেন দালালদের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান কঠোর। একজন পুলিশ কনস্টেবল সর্বদা হাসপাতালের মূল ফটকে নিয়োজিত থাকে। পাশাপাশি ভোলা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সাথে আমাদের সব সময় যোগাযোগ রয়েছে। দালালদের তৎপরতা দেখতে পেলেই আমরা পুলিশকে খবর দেই। হাসপাতালে দালালদের উপস্থিতি প্রতিহত করার জন্য বেসরকারি ডায়গনস্টিক ও ক্লিনিক মালিক সমিতি আমাদের সহযোগিতা করবে বলে আশা করছি।
ভোলা জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার রেজাউল ইসলাম বলেন হাসপাতালে দালালদের তৎপরতার বিষয়ে আমি প্রায় প্রতিটি মিটিংয়ে উপস্থাপন করি। আমি গতকালও হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সাথে এই বিষয়ে কথা বলেছি। দালালদের প্রতিহত করতে আমরা সর্বদা সচেষ্ট।
ভোলা জেলা বেসরকারি ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি জাহিদুল হক শুভ বলেন দালালদের ধারা রোগীরা ভোগান্তিতে পরবে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে আমার অনুরোধ সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে এসব অপর্কমের সাথে যারাই জড়িত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক।