ইলিশা ঘাটের অব্যাবস্থাপনার কারণে যাত্রীরা পাচ্ছে না গ্রীন লাইনের সুফল”
মুহাম্মদ শওকাত হোসেন।
সম্পাদক, দৈনিক আজকের ভোলা।
ঢাকা – ভোলা গ্রীন লাইন সার্ভিস চালু হওয়ার পক্ষে ছিল ভোলার আপামর জনগণ। জনগণের সমর্থন এবং আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে গ্রীন লাইন চালু হওয়ার মাধ্যমে। ১০ ডিসেম্বর থেকে নিয়মিতভাবে গ্রীন লাইন ঢাকা থেকে সকাল আটটায় ছেড়ে বারোটা থেকে সাড়ে বারোটার মধ্যে ইলিশা ঘাটে পৌঁছে । আবার দুপুর দেড়টায় ইলিশা ঘাট থেকে ছেড়ে ঢাকায় এসে সন্ধ্যা ছটার মধ্যে পৌঁছে । স্বাভাবিকভাবেই এ ধরনের একটি সার্ভিস পেয়ে ভোলার জনগণ খুশি । বিশেষ করে যারা স্বল্প সময়ে ঢাকায় এসে কাজ সেরে চলে যেতে চান, তাদের জন্য এ সার্ভিসটি খুবই উপযোগী।
কিন্তু ইলিশা ঘাটের অব্যবস্থাপনা এবং দুর্গতির কারণে যাত্রীদের কষ্টের সীমা নেই । যাত্রীরা এখানে উঠতে-নামতে প্রতিদিন নানা ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়ে । অনেক কষ্ট সহ্য করে গ্রীনলাইনে উঠতে হচ্ছে ।
আমি নিজেও এর ভুক্তভোগী হওয়ার কারণে এ বিষয়ে কলম না ধরে পারলাম না। এর মূল কারণ হচ্ছে ফেরি পারাপারের জন্য অসংখ্য ট্রাক প্রায় এক দেড় মাইল জুড়ে রাস্তার অর্ধেকটা দখল করে থাকে । বাকি অর্ধেকের মধ্যে সকল যানবাহন আসা-যাওয়া করতে হয়। সমস্যা শুরু হয় দুপুর বারোটার পর থেকে । কারণ এ সময়ে লক্ষ্মীপুর এবং বরিশাল থেকে দুটি লঞ্চ-ফেরি এবং গ্রীনলাইন সাড়ে বারোটার সময় এসে ইলিশা ঘাটে ভিড়ে । ফলে হাজার হাজার মানুষ যখন লঞ্চ থেকে নেমে ভোলার পথে আসতে থাকে । অন্যদিকে এসব লঞ্চে উঠার জন্য শত সহজ মানুষ তখন ভোলা থেকে ইলিশা ঘাটের দিকে যায় । ফলে ইলিশা ঘাট এর ১/২ মাইল দূরে থেকেই শুরু হয় যানজট। এ যানজট থামানোর কোন ব্যবস্থা নেই। নেই কোন ট্রাফিক ব্যবস্থা নেই কোন সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থা। কোনরকম আইন-শৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের তৎপরতা ওখানে দেখা যায়নি। ফলে ওখানে এই যানজটে যখন সকল যানবাহন আটকে যায়, তখন যাত্রীরা সময়ের মধ্যে গ্রীন লাইন এ ওঠার জন্য বাধ্য হয়ে এক দেড় মাইল দূরে থেকে তাদের বাহন অটো রিক্সা কিংবা অন্য যে কোনো বাহন থেকে নেমে পায়ে হেঁটে নিজের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে মাথায় নিয়ে খুব কষ্ট করে হেঁটে যেতে হয়। যেহেতু ঢাকার যাত্রীদের কাছে লাগেজ ভারী থাকে তাই তাদের তখন দুর্গতির সীমা থাকে না । এতটা কষ্ট করেও অনেক যাত্রী গ্রীন লাইনের টিকিট কেটেও গ্রীন লাইন এ উঠতে পারে না । কারণ গ্রীন লাইন সময় মত অর্থাৎ দেড়টার সময় ছেড়ে যায়। ফলে এইসব যাত্রীদের রাগে দুঃখে ক্ষোভে এবং ও ব্যর্থতা নিয়ে বাড়ি ফিরে আসতে হয়। প্রতিদিনই এই সমস্যা হচ্ছে অথচ এই সমস্যার সমাধান করার কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।
আমার মনে হয় বিষয়টির প্রতি ভোলার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষভাবে নজর দেয়া উচিত। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ সবাই মিলে এই সমস্যা নিরসনের জন্য আশু উদ্যোগ প্রয়োজন । এজন্য প্রয়োজনবোধে মূল ঘাট থেকে কিছুটা দূরেই যানবাহন প্রতিরোধ করা উচিত । কারণ একটি যদি বাস ঘাট পর্যন্ত ঢুকে, আর যদি পাশে ফেরির জন্য ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে ,তাইলে অন্য সব যানবাহন এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায় । তাই একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকেই যাত্রী নামিয়ে দেওয়া দরকার। দ্বিতীয়তঃ অন্যান্য যানবাহন ও একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে রেখে, সেখান থেকে আবার শহরের দিকে চলে আসার জন্য ব্যবস্থা করা দরকার। অথবা এই ট্রাকগুলোকে আরো দূরে এনে রাখা উচিত, যাতে ঘাটের কাছে গিয়ে এরা সমস্যাটা সৃষ্টি করতে না পারে। এ ব্যাপারে পুলিশ ফাঁড়ি পর্যন্ত যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিনা ভেবে দেখা উচিত । এ ব্যাপারে আশু ব্যবস্থা না নিলে প্রতিদিনই সাধারণ যাত্রীরা এ ধরনের দুরবস্থার মধ্যে পড়বে এবং এর ফলে সুদুরপ্রসারি ভাবে জনগণের সাধের গ্রিনলাইন যাত্রী সমস্যার মধ্যে পড়ে যেতে পারে । আমরা আশা করবো এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অতিসত্বর ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনগণের চরম দুর্ভোগ প্রতিরোধে এগিয়ে আসবে।