“ভোলার কাঙ্খিত উন্নয়ন ও নাগরিক সমাজের ভাবনা” শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত
ভোলা-বরিশাল ব্রীজ, সরকারি মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে
ইয়াছিনুল ঈমন, সম্পাদক, আমাদের ভোলা।
“ভোলার কাঙ্খিত উন্নয়ন ও নাগরিক সমাজের ভাবনা” শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল ভোলা শহরের দি প্যাপিলন কনভেনশন সেন্টারে ‘ব-দ্বীপ ফোরাম’ এর আয়োজনে এই গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দৈনিক আজকের ভোলার সম্পাদক আলহাজ্ব মুহাম্মদ শওকাত হোসেন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গোল টেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, জেলা প্রশাসক মোঃ তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মামুন আল ফারুক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ, ভোলা শেখ ফজিলাতুননেছা মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর রুহুল আমিন জাহাঙ্গীর, প্রবীন সাংবাদিক এম এ তাহের, ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুনুর রশিদ, ভোলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম মোঃ আলতাফ হোসেন জেলা প্রথামকি শিক্ষা অফিসার নুর-ই আলম সিদ্দিকী, রোডস এন্ড হাইওয়ের এ্যাসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মোঃ রাসেল প্রমুখ।
চট্টগ্রাম বন গবেষণা কর্মকর্তা এম জহিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ভোলা জেলা সভাপতি মোবাশ্বের উল্ল্যাহ চৌধুরী, জেলা বিজেপির সভাপতি আমিরুল ইসলাম রতন, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আসিফ আলতাফ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মহিউদ্দিন, জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোতাছিন বিল্লাহ, জেলা ঈমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা মীর বেলায়েত হোসেন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের সেলিম, এ রব স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক ও বিয়ে বাজারের স্বত্বাধিকারী মোঃ মনিরুল ইসলাম, হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স ফোরামের সম্পাদক মোঃ হোসেন, সুন্দরবন গ্যাস কো¤পানির ঠিকাদার মোঃ বেলাল হোসেন প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ পাঠ করবেন ব-দ্বীপ ফোরাম প্রধান সমন্বয়কারী ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মীর মোশারেফ অমি। এসময় শিক্ষক, সাংবাদিক, সমাজকর্মী ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক মোঃ তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, ভোলা একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হলেও এটি সম্ভাবনাময় একটি জেলা। এই জেলায় প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস রয়েছে। ইতিমধ্যে গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। যা ভোলার চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় গ্রিডে দেওয়া হচ্ছে। এই গ্যাস সম্পদকে কাজে লাগিয়ে এখানে শিল্প কারখানা গড়ে উঠলে দেশের অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ হবে। তিনি বলেন, আমি নৌপরিবহনমন্ত্রীর সাথে ইলিশা ঘাটকে নদী বন্দর করার জন্য প্রস্তাব রাখবো। আপনারাও লেখালেখি ও দাবী তুলে এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে পারেন। মুজিববর্ষে ভোলার বিচ্ছিন্ন চরগুলোতে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করার লক্ষ্যে সাবমেরিন ক্যাবেলর মাধ্যমে সেখানে বিদ্যুৎ পৌছে দেওয়া হচ্ছে।
এটি ভোলার উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। ভোলার যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করা হচ্ছে। ইলিশা ঘাট থেকে দক্ষিণ আইচা পর্যন্ত রাস্তা প্রসস্থ করা হচ্ছে। যা ভোলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় মাইলফক হিসেবে মানুষ এটির সুবিধা ভোগ করবে। তিনি আরও বলেন, ভোলায় প্রচুর ধান ও সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানী করা হচ্ছে। এছাড়াও ভোলা নদী মাতৃক জেলা হওয়ায় এখানে প্রচুর ইলিশা উৎপাদন হচ্ছে। ভোলার ধান, সবজি ও মৎস্য সম্পদ দেশের অর্থনৈতিক চালিকা শক্তিকে ব্যাপক সমৃদ্ধ করছে। ভোলায় রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। পর্যটন নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে চর কুকরী কুমকী, তারুয়া দ্বীপ, মনপুরা, চরফ্যাশন, ভোলা সদরসহ বিভিন্ন স্পটগুলোকে নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়নে কাজ করবো। জেলা প্রশাসক বলেন, ভোলার মানুষের বর্তমানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ ব্যাপারে আমরা সুপারিশ পাঠাবো। আশা করি দ্রুত এই দুটি বড় দাবী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাস্তবায়ন করে ভোলাবাসীর স্বপ্ন পূরণ করবেন। এছাড়াও ভোলার যেসব সমস্যাগুলো আছে সেগুলো বাস্তবায়নে আমরা চেষ্টা করবো। এ জন্য ভোলাবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রয়োজন।
বিশেষ অতিথি জেলা পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, সকল উন্নতির আগে আমাদের মানসিক উন্নতির প্রয়োজন। মানসিক উন্নতি ছাড়া কোন উন্নয়নই সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ভোলা একটি দ্বীপ জেলা। আমি এই জেলায় নতুন যোগদান করেছি। এখানকার মূল সমস্যা হচ্ছে অভ্যন্তরিন জমিজমা বিরোধ, মাদক ও শহরের যানজট। ভোলায় জমিজমা নিয়ে প্রায় ১৭ হাজার মামলা রয়েছে। এতে ৩৪ হাজার পরিবার সমস্যার সম্মুখিন। এর থেকে উত্তরণের জন্য সকলকে এগিয়ে এসে কাজ করতে হবে। ভোলায় মাদকের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভোলাকে মাদক মুক্ত করতে এর প্রবেশের পথ বন্ধ ও মাদক ব্যবসায়ী, সেবনকারীদের ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসক কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে কিশোর গ্যাং বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। যার কারণে সমাজে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। কিশোর গ্যাং চক্রকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, ভোলায় ধর্ষণ, বাল্যবিয়ে, নারী নির্যাতনের মাত্রা অনেক বেশি। এটা সামাজিক অপরাধ দমনে সমাজের সকলকে এগিয়ে এসে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ভোলার মহাসড়কগুলোতে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ইলিশা থেকে দক্ষিণ আইচা পর্যন্ত হাইওয়ে রোডে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করি সেগুলো খুব দ্রুত বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেক ব্যবহার করে সাইবার ক্রাইম ও গুজব ছাড়ানোর প্রতিরোধে পুলিশ প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। আশা করি পুলিশ প্রশাসন ভোলার চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধান করে একটি সুন্দর বাসযোগ্য মডেল জেলা হিসেবে গড়ে তুলবো।
সভাপতির বক্তব্য আলহাজ্ব মুহাম্মদ শওকাত হোসেন বলেন, ব-দ্বীপ ফোরাম আয়োজিত আজকের এই গোল টেবিল বৈঠকে যেসব সমস্যা ও সম্ভাবনা এবং দাবী দাওয়া তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করবো। ভোলার মানুষের দাবী সরকারি মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিষয়গুলো খুব দ্রুত বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ভোলার অভিভাবক তোফায়েল আহমেদ এমপি মহোদয়সহ অন্যান্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
গোল টেবিল বৈঠকে উপস্থিত অন্যান্য অতিথিগণ বলেন, দ্বীপজেলা ভোলা সারাদেশ থেকে একটি বিচ্ছিন্ন জেলা। এ জেলায় রয়েছে প্রচুর গ্যাস সম্পদ। যা দিয়ে ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ভোলায় উৎপাদিন বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যাচ্ছে। এই জেলায় উৎপাদন হচ্ছে প্রচুর ধান, সবজি, সুপারী। রয়েছে মৎস্য সম্পদের ভান্ডার। এগুলো ভোলার চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলা রপ্তানী হচ্ছে। আর দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। এগুলোর কারণে ভোলা সারাদেশকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জেলা। বক্তারা বলেন, ভোলার মানুষের মূল সমস্যা হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। সে জন্য ভোলা-বরিশাল ব্রীজ নির্মাণের মাধ্যমে এই সমস্যা সাধারন করতে হবে। চিকিৎসা সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে ভোলাবাসীর প্রাণের দাবী সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ইতিমধ্যে দেশের জেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছেন। ভোলার শিক্ষার মান্নোয়নের জন্য এই জেলায় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় খুবই জরুরী। তাই ভোলায় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বক্তারা আরও বলেন, ভোলার গ্যাস সম্পদকে কাজে লাগিয়ে এখানে শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে হবে। ভোলার প্রচুর গ্যাস রয়েছে সেগুলোকে ভোলার প্রতিটি ঘরে ঘরে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ভোলায় গ্যাস ভিত্তিক শিল্পকারখানা ও ইপিজেড প্রতিষ্ঠানে ভোলার মানুষকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে হবে।
বক্তারা বলেন, শীত মৌসুমে নাব্যতা সংকটের কারণে নৌযান চলাচলে বিঘœতার সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলো নিরসনে করা খুবই প্রয়োজন। এছাড়াও ভোলার নদী থেকে বালু খেকোদের বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। বক্তারা বলেন, ভোলা পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে যাতে পর্যটনকরা এসে ভালো পরিবেশ পায় সে জন্য এই পর্যটনস্পটগুলোকে নিয়ে উর্ধ্বন কর্তৃপক্ষে আরও কাজ করতে হবে। এছাড়াও ভোলার মাদক, ইভটিজিং, বাল্যবিয়ে, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, শিক্ষার মানোন্নয়ন, বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনাকে নিয়ে কাজ করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন বক্তারা।