তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই

অনলাইন ডেস্ক, আমাদের ভোলা.কম।
ফুটবল মাঠের দেশসেরা গোলরক্ষক থেকে রাজনীতিক আমিনুল হক। ২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ছিলেন জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক। ছিলেন দেশের সবচেয়ে দামি ফুটবলার (বেশি ট্রান্সফার ফি)। ২০১৩ সালে ক্লাব ফুটবল থেকে অবসরে যান ফুটবলার হিসেবে সাফল্যের চূড়ায় উঠে। ২০০৩ সালে সাফ ফুটবল ও ২০১০ সালে সাফ গেমস বিজয়সহ অনেক সাফল্য এসেছে তাঁর খেলোয়াড়ি জীবনে। গোলপোস্টের সাবেক এই দক্ষ প্রহরী দেশের ইতিহাসে একমাত্র ফুটবলার হিসেবে ইংলিশ ক্লাব ‘নিউ ক্যাসলে’ খেলার প্রস্তাবও পেয়েছিলেন, যদিও ইনজুরির কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি।
আমিনুল হক ক্লাব ফুটবল থেকে অবসর নিয়ে ২০১৪ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিতে। রাজনীতির মাঠেও দক্ষতা দেখিয়ে পেয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদকের পদ। সক্রিয় রাজনীতি করতে গিয়ে মামলার আসামি হয়ে কারাভোগও করেছেন তিনি। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হতে যাচ্ছেন আমিনুল। কিনেছেন ঢাকা-১৬ ও ঢাকা-১৪ আসনের জন্য দলের মনোনয়ন ফরম।
কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে আমিনুল হক বলেছেন, ‘খেলোয়াড় হিসেবে মানুষের কাছাকাছি যাওয়া এবং তাদের মনের কথা শোনার সুযোগ আমার হয়েছে। এ কারণেই সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনা এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে উন্নয়নের স্বপ্ন নিয়ে জাতীয় সংসদে যেতে চাই। কাজ করতে চাই তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে।’
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় গত রবিবার আমিনুল হকের সঙ্গে কালের কণ্ঠ’র আলাপচারিতায় উঠে এসেছে আগামী নির্বাচন ও নিজের প্রার্থিতা নিয়ে নানা বিষয়। তিনি বলেন, ‘রাজধানী ঢাকার মিরপুরের রূপনগর ও পল্লবী নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৬ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী। তবে দলের সিদ্ধান্তে অন্য আসন থেকে মনোনয়ন পেলেও আমার জন্য কোনো সমস্যা হবে না। দলের নির্দেশ মেনে কাজ করে যাব।’
রাজনীতিতে আসা প্রসঙ্গে আমিনুল বলেন, ‘১৯৯১ সালে বিএনপি যখন নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে তখন আমাদের এলাকা রূপনগরে বিজয় মিছিলে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আমার বয়স তখন ১১ বছর। তখনই বিষয়টি মনে দাগ কেটে যায়। একজন ফুটবলার হিসেবে মানুষের প্রচুর ভালোবাসা পেয়েছি। তখন থেকেই ভাবনায় ছিল—খেলা থেকে অবসরে যাওয়ার পর রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হব। সেই ভাবনার পথ ধরেই খেলোয়াড়ি জীবন শেষে তারেক রহমান সাহেবের হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছি।’
নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে আমিনুল বলেন, ‘খেলোয়াড় হিসেবে মানুষের খুব কাছে যাওয়ার সুযোগ আমার হয়েছে। তখন এই মানুষগুলোর মনের কথা ও দাবি শুনেছি। রাজনীতির ওপর তাদের নেতিবাচক মনোভাব দেখেছি। মানুষ আমাকে তাদের লোক মনে করে, ভালোবাসে। তাই তাদের জন্য কাজ করতে এবং দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে ইতিবাচক কাজ করতে চাই। খেলোয়াড় আমিনুলের মতোই একজন রাজনীতিবিদের কাছেও যেন সাধারণ মানুষ আসতে পারে সেটা আমি চাই।’
জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার রাজনীতিতে আসাকে স্বাগত জানান আমিনুল হক। তিনি বলেন, ‘জনপ্রিয় ও ভালো ক্রীড়াবিদদের রাজনীতিতে আসার প্রয়োজন রয়েছে। বিভিন্ন সেক্টরের ইতিবাচক মনোভাবের সৎ নিষ্ঠাবান ব্যক্তিরাই উন্নয়ন ও পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে পারেন।’ তিনি বলেন, ‘আমি যেহেতু ক্রীড়া জগৎ থেকে এসেছি, সেহেতু ক্রীড়ার উন্নয়নে কাজ করার স্বপ্ন আছে। ক্রীড়া এমন একটি জায়গা যেটি বাংলাদেশকে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিতে পারে। তাই প্রতিটি খেলায় পেশাদারি নিয়ে আসতে কাজ করব।’
আমিনুল হক বলেন, ‘এককভাবে কেবল বিকেএসপির পক্ষে খেলোয়াড় তৈরি করা সম্ভব নয়। প্রতিটি বিভাগ ও জেলায় একটি করে ক্রীড়া একাডেমি তৈরির স্বপ্ন দেখি আমি। সেখানে লেখাপড়া ও খেলাধুলা থাকবে। সবাইকে খেলোয়াড় হতে হবে তা নয়, আমি সব শিশু-কিশোরের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে কাজ করব।’
একসময়ের দেশসেরা এই গোলরক্ষক বলেন, ‘একটি ধারা চালু হয়েছে—যেকোনো ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হয়। আমি এর ঘোরবিরোধী। যোগ্য লোক যে দলেরই হোক না কেন তাঁর মূল্যায়ন করতে হবে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদসহ সবাইকে জবাবদিহির মধ্যে থাকতে হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
নিজেকে তরুণ সমাজের প্রতিনিধি উল্লেখ করে আমিনুল বলেন, ‘বর্তমানে দেশে দুই কোটির ওপরে তরুণ ভোটার রয়েছে। তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা আমি যেভাবে হৃদয় থেকে অনুভব করব, অন্য প্রার্থীরা তা পারবে না। তাই তাদের প্রতিনিধি হিসেবে আমি সংসদ সদস্য হলে তরুণদের উন্নয়নে কাজ করব।’
বিএনপির রাজনীতিতে সংশ্লিষ্ট হওয়ার নেপথ্যের কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে আমিনুল বলেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় রাজনীতি বাংলাদেশে যে শিল্পবিপ্লব ঘটিয়েছে তাতে আমি মুগ্ধ হয়েছি। আমার মা একজন সমাজকর্মী ছিলেন, তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এ কারণে ছোটবেলা থেকেই দলটির প্রতি ভালো লাগা ছিল। পরবর্তী সময়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং তারেক রহমানের মানুষের কাছে গিয়ে তৃণমূল চাঙ্গা করার বিষয়গুলো আমাকে উৎসাহিত করেছে।’
মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমিনুল বলেন, ‘দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা-১৬ ও ঢাকা-১৪ আসনের মনোনয়ন ফরম নিয়েছি। আমার দাদাবাড়ি ভোলায়। তবে মূলত রূপনগরই আমার এলাকা। এখানেই বেড়ে ওঠা। এলাকার জনগণ আমাকে অনেক ভালোবাসে। এখানে মনোনয়ন পেলে আওয়ামী লীগের লোকজনও আমাকে ভোট দেবে। প্রত্যাশা করি, দলের প্রতি একাগ্রতা বিবেচনা করে দলীয় হাইকমান্ড আমাকে ঢাকা-১৬ আসন থেকে মনোনয়ন দেবে। তবে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত দেবেন সে অনুযায়ী বিএনপির একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে দলের জন্য কাজ করে যাব।’
(সূত্র- কালের কন্ঠ)