আজ বিশ্ব পুরুষ দিবস

=============
আজ বিশ্ব পুরুষ দিবস। তবে এটি সত্য যে এ দিবসটি বিশ্ব নারী দিবসের মত আজো এত পরিচিতি লাভ করতে পারেনি।
কেহ কেহ আবার বলে থাকেন এ সব দিবস টিবস আবার কি দরকার। তাদের জন্য বলি একটি বিশেষ দিন থাকলে এই যে শত কর্মব্যস্তার জীবনের মাঝেও অন্তত বিশেষ ভাবে একটু ভাবা, মনে করার এবং স্মরণ করার ও সুযোগ হয়ে যায়।
নারী দিবস পালনে নারীদের চেয়েও পুরুষেরাও যেহেতু সমস্বরে বেশি সোচ্চার থাকে আর পুরুষ দিবস পালনে পুরুষে দের পাশাপাশি নারীরা সমস্বরে সোচ্চার নয় বলে এ অবস্থা কিনা সেটাও ভাবার বিষয়।
যেমন, দিবস টি জানার দিক থেকে যদি দেখা যায় তাহলে যেমন বিশ্ব নারী দিবস ৮ মার্চ সেটা অনেকেই জানেন । কিন্তু পুরুষ দিবস কবে, তা হয়তো অনেকেই জানেনও না।
আবার অনেকটা ঘটা করেই নারী দিবসটি পালন করা হয় নানাবিধ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে। কিন্তু নারী দিবসের মতো নানা আয়োজন নিয়ে নয়, খানিকটা নীরবেই পুরুষ দিবসটি চলে যায়।
যাহোক, ১৯ নভেম্বর বিশ্ব পুরুষ দিবস। বিশ্বব্যাপী পুরুষদের লিঙ্গ ভিত্তিক সমতা, বালক ও পুরুষদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং পুরুষের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরতেই প্রতিবছর দিবসটি পালন করা হয়।
পুরুষ দিবস পালনে প্রথমে ২৩ ফেব্রু য়ারি দিন ধার্য্য করা হয়েছিল। কিন্তু আগে থেকেই এ দিবসটি ‘রেড আর্মি ও নেভি ডে’র জন্য নির্ধারণ করে ফেলায় রাশিয়া। তাই পরে ১৯ নভে ম্বর পুরুষ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় চুড়ান্তভাবে।
ইতিহাসটা এরকম যে, প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে নিহত সেনাদের শ্রদ্ধা জানানো এবং পুরুষ জাতিকে উদ্বুদ্ধ করতে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে ‘রেড আর্মি অ্যান্ড নেভি ডে’ পালন করা হতো। সমাজে পুরুষদের বীরত্ব আর ত্যাগের প্রতি সেই সম্মান জানাতেই মূলত দিবসটি পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়।
দিবসটি পালনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
যেমন:
* বালক, কিশোর, পুরুষদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা,
* নারী-পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন বিষয়ক প্রচারণা চালানো
* নারী-পুরুষ সমতার প্রচার ও পুরুষ দের মধ্যে ইতিবাচক আদর্শ চরিত্রের গুরুত্ব তুলে ধরা
* পুরুষ ও বালকদের নিয়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংস্কার ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করা
* পুরুষ ও বালকদের অর্জন ও অবদানকে উদযাপন করা।
সমাজ, পরিবার, বিবাহ ও শিশু যত্নের ক্ষেত্রে পুরুষদের অবদানকে তুলে ধরাও এই দিবসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
বিশ্বজুড়ে নানান ভাবে পুরুষ দিবসটি পালনের রেওয়াজ বা রীতি রয়েছে প্রতি বছর ১৯ নভেম্বর বিশ্বের ৭০ টির বেশি দেশে দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। নারী-পুরুষ আসলে সমাজের দুটি মিলিত স্তম্ভ, যার ওপর ভিত্তি করেই দাঁড়িয়ে থাকে একটাসুস্থ-স্বাভাবিকশান্তিপূর্ণ সমাজ ।
আজ বিশ্ব পুরুষ দিবসে যদি
পরিসংখ্যানের দিকে তাকানো যায় তাহলে বোধ হয় খুব সহজে বলা যাবে যে, পুরুষ মানুষই হয়তো পৃথিবীর সবচাইতে অবলা অসহায় প্রাণী।
যেমন:
# পৃথিবীতে আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ৭৫% ই হলো পুরুষ
# গৃহহীন মানুষের মাঝে ৮৫% হচ্ছে পুরুষ
# খুন হওয়া মানুষের মাঝে ৭০% হচ্ছে পুরুষ।
# কর্মক্ষেত্রে মারা যাওয়াদের মধ্যে ৯৩% হচ্ছে পুরুষ ।
# পুরুষেরা মহিলাদের চাইতে ৩-৬ বছর আগে মারা যায়।
# মনকি করোনা মহামারীতেও নারীর ৩গুন বেশী মারা যাচ্ছে পুরুষ।
# প্রতি বছর মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের চাইতেও বেশি পুরুষ প্রোস্টেট ক্যান্সারে মারা যায়।
# পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে সমান অপরাধের জন্য একজন পুরুষ একজন মহিলা আসামীর চাইতেও বেশি সাজা ভোগ করে।
# পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই জীবন সংসারে সকলের কল্যাণে সব চেয়ে বেশী প্রাণান্ত শারীরিক ও মানুষিক শ্রম দেয় পুরুষ।
# অধিকাংশক্ষেত্রে অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে তোলা সংসারে শেষ বয়সে বড় অপাংক্তেয় হয়ে যায় পুরুষ মানুষটি।
# পৃথিবীর প্রায় সব দেশে নারী নির্যা তন আইন থাকলেও পুরুষ নির্যাতন নামে কোন দেশে কোন আইন নেই।
সবাই বলে নারীরা অবলা কেন যেন আমার মনে হয় সম্ভবত পুরুষ জাতিই পৃথিবীর সবচাইতে হয়তো বেশি অবলা অসহায় জাতি।
তাই বিশ্ব পুরুষ দিবসে সমস্বরে বলি
Happy world Men’s Day.
ভালো থাক, সুখে থাক, আনন্দে থাক এবং সর্বপরি সকলের জন্য
নি:স্বার্থ ভাবে নিবেদিত থাক পৃথিবীর সকল পুরুষ এ প্রত্যাশা রইলো।
শুভ কামনা সকল পুরুষের জন্য।
লেখকঃ সুপ্তকূঁড়ি