ভোলার লালমোহনে মিষ্টি খেতে প্রায় দুই লক্ষ টাকা নিল জ্বিন!
বিশেষ প্রতিনিধি, আমাদের ভোলা।
জ্বিনেরা মিষ্টি খায়। তাও প্রায় দুই লক্ষ টাকার। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এমনটাই ঘটেছে ভোলার লালমোহনে। মূলত জ্বিনের মিষ্টি খাওয়ার নাম করে ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। এমনই একটি জ্বিন প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছে লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝ গ্রামের কমড় আলী মাঝি বাড়ির শাশুড়ি ও পুত্রবধূ। প্রতারণার শিকার হওয়া শাশুড়ি বিবি হনুফা ও পুত্রবধূ মুক্তা বেগম।
ভুক্তভোগী পুত্রবধূ মুক্তা বেগম জানান, ঘটনার শুরু গত মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাত ১ টায়। ওই সময় হাঠাৎই একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে মুক্তার নাম্বারে। ওই নাম্বারের অপর প্রান্ত থেকে লম্বা সালাম দিয়ে বলে আমরা বাতাসের তৈরি, জ্বিন জাতি। ভাগ্যবতী নারী তুই, যার জন্যই তোকে ফোন করা হয়েছে। তোদের আর কিছু করতে হবে না, সারাজীবন বসে বসে খেতে পারবি। অপরপ্রান্তের এমন কথা শুনে মোবাইল নিয়ে মুক্তা ছুটে যান তার শাশুড়ি বিবি হনুফার কাছে। এরপর ওই কথিত জ্বিন কথা শুরু করে তার সঙ্গে। এরপর তাকে ইসলামী বিভিন্ন কথা শুনিয়ে হনুফার বিশ্বাস অর্জন করে।
মুক্তা বেগম আরও জানান, এরপর প্রতিদিন রাতেই ফোন করে কথা বলতে থেকে ওই কথিত জ্বিন। এক পর্যায়ে তাদেরকে হাড়ি ভর্তি স্বর্ণ দেয়ার প্রলোভন দেখায়। এরপর তারা কথিত ওই জ্বিনের ফাঁদে পড়ে। ওই কথিত জ্বিন এক সময় বলে এসব স্বর্ণ পেতে হলে তাদের সঙ্গে ১৭ হাজার ৯শত ৯৯ জন জ্বিনকে মিষ্টি খাওয়াতে হবে। এ মিষ্টি খাওয়াতে ওইসব জ্বিনদের টাকা দিতে হবে। লোভে পড়ে ওই কথিত জ্বিনদের জন্য টাকা পাঠানো শুরু করে মুক্তা বেগম ও তার শ্বাশুরি।
মুক্তার শাশুড়ি বিবি হনুফা বলেন, আমাদের সঙ্গে ০১৬৩২৮২২৯২৮ ও ০১৩১২৭১১৫৮২ এই দুইটি নাম্বার দিয়ে এমন করে কথা বলেছে, যা বিশ্বাস না করার কোনো উপায় নেই। তারা স্বর্ণ রাখার জন্য আমাদের দিয়ে পাতিল ও নতুন হলুদ কাপড় কিনিয়েছে। তারা বলেছে ওই পাতিলটি হলুদ কাপড় দিয়ে ডেকে রাখতে, যেকোনো সময় স্বর্ণে ভরে যাবে পাতিলটি। এছাড়াও ওই কথিত জ্বিন বলেছে; এসব কথা যদি আমরা কাউকে বলি তাহলে আমাদের স্বামী ও বাচ্চা মারা যাবে এবং অনেক বড় ক্ষতি হবে। তাই আমরা এক প্রকার বাধ্য হয়ে তাদের কথা মত ঋণ, দার-দেনা করে টাকা দেয়া শুরু করি। ওই কথিত জ্বিন আমাদের থেকে মিষ্টি খাওয়া ও বিভিন্ন খরচসহ মোট দুই লক্ষ টাকা দাবী করে। কথা মত আমরা কাউকে না জানিয়ে দুইটি বিকাশ নাম্বারে মোট ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেই। সবশেষ গত ২ অক্টোবর (রোববার) আমার মেঝো ছেলেকে দিয়ে টাকা পাঠাতে গেলে সে বিষয়টি সন্দেহ করে। এরপর আমরা মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। এতে করে আমরা নি:স্ব হয়ে পড়েছি।
বিবি হনুফার মেঝো ছেলে মো. নাদিম জানান, আমাদের কাউকে না জানিয়েই আমার মা ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ওই কথিত জ্বিনের ফাঁদে পড়ে টাকা দিয়েছে। আমাকে দিয়েও ওই জ্বিনের জন্য টাকা পাঠাতে চেয়েছে তারা। তবে বিষয়টি আমার সন্দেহ হয়। এরপর মানুষের সঙ্গে কথা বলে বুঝতি পারি আসলে জ্বিন নয়, একটি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছে আমার মা ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী। এ ঘটনায় আমরা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এদিকে, ঘটনাটি জানাজানি হয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় ওই এলাকায় চলছে ব্যাপক তোলপাড়। এসব নিরীহ ও সহজ-সরল মানুষের সঙ্গে এমন প্রতারণাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী এলাকাবাসীর।
এব্যাপারে লালমোহন থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. এনায়েত হোসেন বলেন, এমন কোনো ঘটনায় কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।