ভোলা দারুল হাদিস কামিল মাদরাসায় শতবর্ষ উযযাপনের প্রস্তুতি

ইয়াছিনুল ইমন , আমাদের ভোলা।
দিন-মাস-বছর-যুগের সীমানা গড়িয়ে শতবর্ষে পদার্পণ করছে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রাচিনতম শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ভোলা দারুল হাদিস কামিল (স্নাতকোত্তর)মাদরাসা। এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের শতবর্ষ উদযাপন-২০২৫ উপলক্ষ্যে শতবর্ষ উদযাপন পরিষদের আয়োজনে এলামনাইদের অনলাইন ও অফলাইন রেজিষ্ট্রেশন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শনিবার (৪অক্টবর)মাদরাসার সভা কক্ষে সকাল দশ ঘটিকায় ভোলা দারুল হাদিস কামিল (স্নাতকোত্তর)মাদরাসার শতবর্ষ উদযাপন পরিষদের আহবায়ক অত্র মাদরাসার সাবেক কৃতি ছাত্র এবং সাবেক বিভাগীয় প্রধান আরবি ভাষা ও ইসলামি শিক্ষা বিভাগ দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা ও সম্পাদক মাসিক সংস্কার ঢাকা প্রফেসর ড.মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব অত্র মাদরাসার সাবেক কৃতি ছাত্র,বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদাররেছীনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ভোলা দারুল হাদিস কামিল (স্নাতকোত্তর)মাদরাসার বর্তমান উপাধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাওলানা মোহাম্মদ মোবাশ্বিরুল হক নাঈম তিনি সর্বপ্রথম এই মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা, সে সময়ের ওলামায়ে কেরাম যারা দ্বীনি শিক্ষার কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন তাদের অবদানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।তিনি আরো বলেন বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হলো মাদরাসা শিক্ষা। দ্বীনী জ্ঞান, আখলাক ও সমাজ সংস্কারে আমাদের দেশের মাদরাসাগুলো যুগ যুগ ধরে অসাধারণ অবদান রেখে আসছে।
ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯১৩ সালের ১লা জানুয়ারি আধুনিক মুসলিম রেনেসার যুগে। প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশের দ্বীনি শিক্ষার সর্বোৎকৃষ্ট প্রান কেন্দ্রটি শুধু দেশের শিক্ষা বিকাশে নয় বরং আন্তর্জাতিক ভাবেও শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করে চলেছে। এটি কেবল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয় বরং মুসলিম সমাজের শিক্ষা, সংস্কৃতি, সমাজ সংস্কার ও জাতীয় জাগরনের ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। শতবর্ষ উদযাপনের মাধ্যমে মাদরাসার দীর্ঘ ঐতিহাসিক অবদান স্বীকৃতি পাবে বলে জানান। অনুষ্ঠানে শতবর্ষ উদযাপন পরিষদের আহবায়ক প্রফেসর ড.মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন এ প্রতিষ্ঠানের শতবর্ষ উদযাপন নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বইছে সাবেক ও বর্তমান ছাত্রসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। তারা ইতিহাসের পাতায় মাদরাসার রুপ-রস রাঙিয়ে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অফুরন্ত। এ মাদরাসার শিক্ষা জীবন পার করে দেশ ও দেশের বাইরে দ্বীনি খেদমতে নিয়োজিত রয়েছেন অসংখ্যজন। তাদের মিলনমেলায় বাড়তি আকর্ষণ ছড়াবে শতবর্ষী অনুষ্ঠানটি। তিনি উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন এই অনুষ্ঠানটি বাস্তবায়নে সকলের সার্বিক সহোযোগিতা একান্ত কাম্য। বাস্তবায়নে আমাদেরকে আরো অনেক সভা করতে হবে বলে জানান। মাদরাসার বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন ভোলা জেলার সুযোগ্য জেলা প্রশাসক জনাব মোঃআজাদ জাহান। মাদরাসাটির সার্বিক ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান ভোলা পৌরসভার সাবেক সফল মেয়র ভোলা জেলা বিএনপির আহবায়ক জনাব আলহাজ্ব গোলাম নবী আলমগীর। মাদরাসার বর্তমান অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাওলানা আবুল বাশার মোঃ আব্দুর রহিম ও উপাধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাওলানা মোহাম্মদ মোবাশ্বিরুল হক নাঈম এর পরিচালনায় শিক্ষক- কর্মচারীর সংখ্যা ৩৭ জন। মাদরাসাটি ১ জানুয়ারি ১৯১৩ সনে দাখিল, ১ জুলাই ১৯২৫ সালে আলিম( সাধারন বিভাগ),১জুলাই ১৯৩১ সালে ফাজিল(স্নাতক বিভাগ), ১জুলাই ১৯৫৭ সালে কামিল (হাদিস বিভাগ), ১জুলাই ১৯৭৬ সালে আলিম (বিজ্ঞান বিভাগ),১জুলাই ১৯৯৬ সালে কামিল (ফিকাহ বিভাগ), ১জানুয়ারী ২০০১ সালে দাখিল (কম্পিউটার বিভাগ), ৮ নভেম্বর ২০১৬ সালে ফাজিল (অনার্স আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ), ২৬ জুন ২০২৪ কামিল মাস্টার্স (এক বছর মেয়াদি) চালু হয়। মাদরাসাটির প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে বিভিন্ন স্তরে এপর্যন্ত ১০ জন অধ্যক্ষ এবং ৪ জন উপাধ্যক্ষ কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে মাদরাসাটির শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মাদরাসার সাবেক কৃতি ছাত্র ভোলা জেলা জজ আদালতের অতিরিক্ত পি পি এডভোকেট মোঃ ইউসুফ, জনতাবাজার জিয়াউর রহমান কলেজ চরফ্যাশনের অধ্যক্ষ মোঃ ইউনুস শরীফ,৮নং মধ্য ইলিশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ মোঃ ফরিদ উদ্দিন, নাজিউর রহমান কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ মাকসুদুর রহমান, দক্ষিণ রুহিতা এরহমানিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা মোঃ মুছা কালিমুল্লাহসহ মাদরাসার সাবেক শিক্ষার্থীগন উপস্থিত ছিলেন। বিগত ২০১২ সালে ভোলা দারুল হাদিস কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদরাসার শতবর্ষ পূর্তি উদযাপনের উদ্যোগ নেয়া হলেও দেশের প্রতিকুল পরিবেশের কারনে তা আর করা সম্ভব হয়নি। এবছর উদযাপনের লক্ষ্যে শতবর্ষ উদযাপনের জন্য ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫,মঙ্গলবার,তারিখ নির্ধারন করা হয়েছে। সকাল ১০ ঘটিকায়, স্থান মাদরাসা ক্যাম্পাস। এলামনাই রোজিস্ট্রেশনের শেষ তারিখ ৩১ অক্টবর ২০২৫ এবং শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন উপদেষ্টা পরিষদ,শতবর্ষ উদযাপন পরিষদ,শতবর্ষ উদযাপন বিভিন্ন উপ-পরিষদ সমূহ গঠন করা হয়েছে। একটি সমৃদ্ধ স্নরণিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত ও খসড়া বাজেট তৈরী করা হয়। জন প্রতি রেজিষ্ট্রেশন ফি ২০০০/-টাকা ধার্য্য করা হয়।

