কনডেম সেলে মিন্নি, ফোনে কথা বলেছেন মায়ের সঙ্গে
নিউজ ডেস্ক , আমাদের ভোলা.কম।
বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ছয় আসামিকে বরগুনা জেলা কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। এই মুহূর্তে বরগুনা জেলা কারাগারের কনডেম সেলে সদ্য ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত এই ছয় বন্দি ব্যতীত অন্য কোন কারাবন্দি নেই। তবে মিন্নিসহ ছয় আসামির সবাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কারাবিধি অনুযায়ী তাদের দেওয়া হয়েছে থালা, বাটি, কম্বল ও দুই সেট জামাকাপড়। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) সকালে কারাগার থেকে মায়ের সঙ্গে ফোনে পাঁচ মিনিট কথা বলেছেন মিন্নি।
বরগুনা জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক (জেল সুপার) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই মুহূর্তে বরগুনার কারাগারে নারী বন্দিদের মধ্যে একমাত্র মিন্নিই কনডেম সেলে আছেন। মিন্নি ব্যতীত বরগুনার কারাগারের কনডেম সেলে অন্য কোন নারী বন্দি নেই। এছাড়াও রিফাত হত্যা মামলার অপর পাঁচজন পুরুষ আসামিকেও কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। এই পাঁচ পুরুষ বন্দি ব্যতীত বরগুনার কারাগারের কনডেম সেলে আর অন্য কোনো পুরুষ বন্দিও নেই।’
মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মিন্নিকে রাখা হয়েছে নারী ওয়ার্ডের কনডেম সেলে। আর পুরুষ বন্দিরা আছেন পুরুষ ওয়ার্ডের কনডেম সেলে।’
তিনি বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কারাগারের যে বিশেষ কক্ষে রাখা হয় সেটাকে কনডেম সেল বলা হয়। কনডেম সেলের বন্দিরা কখনো সেল থেকে বাহিরে বের হতে পারেন না। এসব বন্দিরা মাসে একবার তার স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। এছাড়াও সপ্তাহে একবার তারা ফোনে তাদের স্বজনদের সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কথা বলতে পারেন। সে হিসেবে আজ সকালে মিন্নি তার মা-বাবার সঙ্গে ফোনে পাঁচ মিনিট কথা বলেছেন।’
রিফাত হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামিই কনডেম সেলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘কারাবিধি অনুযায়ী ছয় বন্দিকেই কনডেম সেলে থালা, বাটি ও কম্বল দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রতি আসামিকে কারাগারের পক্ষ থেকে দুই সেট পোশাক দেয়া হয়েছে। এ পোশাক তারা পরিধান করবেন। এবং নিয়মিত আসামিরা যে খাবার গ্রহণ করেন, সেটা তাদের দেওয়া হচ্ছে।’
মিনিসহ এই মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামিকে দেশের অন্য কোন কারাগারে স্থানান্তরের পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে জেল সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়টি আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করব। আপাতত এই আসামিদের উচ্চ আদালতে আপিল করার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।’
মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘মিন্নির সঙ্গে সকালে আমি ও তার মা কথা বলেছি। আমার মেয়েটা খুবই বিধ্বস্ত। আমরা রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করবো।’
রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন- রাকিবুল হাসান রিফাত ওরফে রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), মো. রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯) ও আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯)। অন্যদিকে খালাস পেয়েছেন মো. মুসা (২২), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো. সাগর (১৯) ও কামরুল হাসান সাইমুন (২১)। আসামিদের মধ্যে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি হাইকোর্ট থেকে জামিনে ছিলেন। আর আসামি মো. মুসা হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পলাতক।
২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনের সড়কে রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ডের গড়া কিশোর গ্যাং বন্ড গ্রুপ। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ২ জুলাই মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড নিহত হন। রিফাত হত্যা মামলায় ২৪ জনকে আসামি করে দুটি ভাগে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর চার্জশিট দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এর মধ্যে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক ও ১৪ জন শিশু আসামি। মামলার ২৪ আসামির মধ্যে বুধবার নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় ঘোষণা করা হয়।
সূত্র- পূর্বপশ্চিমবিডি