মানবিকতা, প্রতিবেশি এবং সাংবাদিক॥

সংবাদ সংগ্রহের জন্য দুপুরে সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম দুলাল ও সালাম সেন্টু ভাইসহ গজারিয়াতে যাই। ফেরার পথে গজারিয়া বাজারের আওয়ামীলীগ অফিসের সামনে একটু দাঁড়াই। এর মধ্যেই এক মহিলা কোলে ছোট্ট একটা শিশু নিয়ে এসে অনেকটা অসহায়ত্বের সহিত আমাদের বললেন ভাই আমারে নিয়ে একটু তাড়াতাড়ি হসপিটাল যাবেন। ছেলেটা পানিতে পড়েছে। আমরা তখন মটরসাইকেল স্ট্রাট করে লালমোহনের দিকে রওয়ানা দিবো। ওই মহিলার চেহারার অসহায়ত্ব আর কোলের শিশুটার দিকে নজর পড়ে আমাদের। দেখে খুব খারাপ লেগেছে। হোন্ডা চালাচ্ছেন দুলাল ভাই, মাঝে আমি আর পিছনে সেন্টু ভাই। কিছু না ভেবেই সেন্টু ভাইকে বললাম নামেন, তিনিও আমার কথা শুনে নেমে গেলেন, পরে দুলাল ভাইকে বললাম আপনি মহিলা আর শিশুটিকে নিয়ে হসপিটালের দিকে যান। আমরা আসতে পারবোই। দুলাল ভাইও আমার কথা শুনে কিছু না ভেবে মহিলা আর শিশুকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশে মটরসাইকেল চালানো শুরু করেছেন। আমাদের জন্য আগ থেকেই গজারিয়ায় অপেক্ষারত সাংবাদিক মনজুর রহমান ভাই ও মাসুম বিল্লাহ। এখন অবস্থা এমন হয়ে গেছে মটরসাইকেল একটা আর মানুষ চারজন। তাতে এক মটরসাইকেলে চারজন লালমোহন আসা কোনোভাবেই সম্ভব না। এরমধ্যে মনজু ভাই বললো আপনারা আমার হোন্ডা নিয়ে চলে যান, আমি গাড়িতে করে আসবো। যেই কথা সেই কাজ; হোন্ডার চাবী নিয়ে আমি নিজেই হসপিটালের উদ্দেশে হোন্ডা চালানো শুরু করেছি। পথের মধ্যে ওই মহিলাসহ শিশুকে নিয়ে রওয়ানা দেয়া দুলাল ভাইয়ের সাথে দেখা, তাকে বললাম আপনি একটু তাড়াতাড়ি করে আসেন আমরা হসপিটাল গিয়ে অপেক্ষা করি। আমাদের পৌছানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই দুলাল ভাইও পানিতে পড়া গুরুতর অসুস্থ শিশুসহ মহিলাকে নিয়ে পৌছেছেন হসপিটালে। দ্রুত ইমার্জেন্সির ডাক্তারকে ডেকে শিশুটিকে দেখালাম। এরপর ডাক্তার বললেন শিশুর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। হসপিটাল ভর্তি করতে হবে। আমরাও বললাম ভর্তি করেন। ডাক্তার ভর্তি দিলেন। এ ফাঁকে শিশুকে নিয়ে হোন্ডায় করে আসা মহিলা বললেন আপনাদের ভাড়া কত! আমি হেসে দিয়ে বললাম আসলে আমরা হোন্ডা ভাড়ায় চালাই না, আমরা সবাই সাংবাদিক। এটা শুনে মহিলা বললেন ভাই আসলে আমি বুঝতে পারিনি। আমরাও কিছু মনে করেনি তাঁর কথায়। পরে জানতে পারি ওই মহিলা নিজেও শিশুটির কিছু হন না। তিনি একজন প্রতিবেশি। শিশুর বাবা থাকেন চট্টগ্রামে আর শিশুর পানিতে পড়া দেখে তাকে উদ্ধারের পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন শিশুর মা। তার জন্য এই প্রতিবেশি মহিলা মুক্তা নিজেই শিশুটিকে নিয়ে ছুটেছেন কোনোভাবে জীবন বাঁচানোর চেষ্টায়। যাই হোক পরে শিশুকে নিয়ে হসপিটালের ওয়ার্ডে গেলে তাকে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। এরপর ডাক্তারের লেখা কিছু ওষুধ হসপিটালে সরবরাহ না থাকায় বাহিরের ফার্মেসি থেকে নিজ খরচে এনে দেন সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম দুলাল ভাই। শিশুটির সেবায় আন্তরিকতা দেখিয়েছেন নার্সরাও। পরে একটি সিটে শিশুটিকে রেখে তার মাকে আসার খবর পৌছে আমরা ফিরেছি। ফেরার সময় দেখে মনে হয়েছে শিশুর সাথে আসা ওই প্রতিবেশি মহিলাও আমাদের কর্মকাণ্ডে অনেকটা স্বস্তি পেয়েছেন। হয়েছেন চিন্তা মুক্ত। আমরাও নিশ্চিন্তে ত্যাগ করেছি হসপিটাল। আল্লাহ ভালো রাখুক শিশুটিকে এই কামনাই রইলো।

সাংবাদিক হাসান পিন্টুর ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

ফেসবুকে লাইক দিন

আর্কাইভ

মার্চ ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« ফেব্রুয়ারি    
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  

সর্বমোট ভিজিটর

counter
এই সাইটের কোন লেখা অনুমতি ছাড়া কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ!
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।