চরফ্যাশনের চর কচ্ছপিয়ায় চার্চ কলোনির ৫৪ পরিবার জিম্মি!
এম আবু সিদ্দিক,বিশেষ প্রতিনিধি, আমাদের ভোলা।
ভোলার চরফ্যাশনে চর কচ্ছপিয়ায় চার্চ কলোনির ৫৪ অসহায় পরিবার জিম্মি সাইদ ফরাজীর কাছে। গরিব অসহায় হত দরিদ্র এসব পরিবারকে ডায়েসিসান ট্রাস্ট চার্চ অফ বাংলাদেশের জমি রেজিষ্ট্রি করে দেয়ার নামে চার্চ কলোনি থেকে প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করে সাইদ ফরাজী ও তার ছেলে রফিক ফরাজী। এছাড়া ট্রাস্টি চার্চ অফ বাংলাদেশের টমাস সংকর বিশ্বাস ও স্বপনের যোগসূত্রে অসহায় পরিবারের আঙ্গিনায় সৃজিত গাছ ও পুকুরে মাছ বিক্রি করে প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ভুক্তভোগী পরিবারদের পক্ষে সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামী করে চরফ্যাশন আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছে।
মামলা নং-২৯৩/২০২০
উপকূলীয় এলাকা ভোলার চরফ্যাশনে ১৯৯১ সালে প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড়ে আশ্রয়হীন হতদরিদ্র পরিবারকে পুনঃর্বাসনে চার্চ অফ বাংলাদেশ চর মানিকা ইউনিয়নে চর কচ্ছপিয়া গ্রামে ৫৪ টি পরিবারকে বসবাস ও তাদেরকে আয়বর্ধক কর্মসংস্থান মূলক কার্যক্রম পরিচালনায় ও তাদের প্রশিক্ষনের জন্য উপকূলের বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ট্রাস্টকে ৪ একর জমি হস্তান্তর করে। দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর যাবৎ “চার্চ কলোনীতে বসবাসকারী ৫৪ পরিবার যৌথ ভাবে পুকুরে মাছ চাষ ও নিজ নিজ আঙ্গিনায় গাছপালা লাগিয়ে আয়বর্ধন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।
সরেজমিন কচ্ছপিয়া এলাকায় বসবাসরত ছিন্নমূল অসহায় পরিবারদের সাথে কথা বলে জানা যায় তারা এখন এক অজানা আতঙ্কের মধ্যে আছে। স্থানীয় সাইদ ফরাজী ও তার ছেলেসহ কিছু সংখ্যক প্রভাবশালী ও ক্যাডারদের কাছে জিম্মি চার্চ কলোনী বাসী। কলোনীর বাসিন্দা তোফায়েল, জাহাঙ্গির, শাহে আলম, রহিমা বেগম, সফুরা খাতুন বলেন, কলোনীর বসত ভিটা রেজিষ্ট্রি না করলে তাদেরকে ভিটা বাড়ী থেকে উচ্ছেদের হুমকি দিয়ে টমাস সংকর ও স্বপনের দেহাই দিয়ে কয়েক দফা আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। বিষয়টি আমরা বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ট্রাস্টকে অবহিত করেছি। ট্রাস্টির রক্ষনাবেক্ষন সংস্থা হিসেবে কোস্ট ট্রাস্ট আমাদেরকে আয় বর্ধন মূলক বিভিন্ন প্রশিক্ষন ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে স্বাবলম্বী করতে সহায়তা করছে। হত দরিদ্ররা আয়মূলক কাজে স্বাবলম্বী হওয়ায় ট্রাস্টি থেকে স্ব স্ব বসত ভিটা রেজিষ্ট্রি করতে হবে বলে সাইদ ফরাজী স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসীদের নিয়ে উচ্ছেদের ভয়ভীতি দেখিয়ে দরিদ্রদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করে। নিয়ম অনুযায়ী চার্চ বাংলাদেশের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী ট্রাস্টির সম্পত্তি ব্যক্তি মালিকানায় দলিল দেয়ার কোন বৈধতা নেই।
চার্চ কলোনী সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ট্রাস্টি চার্চ অব বাংলাদেশের ডিনারী সেনেটারী টমাস সঙ্কর বিশ্বাস ও ম্যানেজার ল্যান্ড স্বপনের যোগসাজসে চার্চ কলোনীতে বসবাসরত পরিবারগুলোকে বসত ভিটা রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার নামে কচ্ছপিয়া এলাকার সাইদ ফরাজি ও তার ছেলে রফিক ফরাজী বিভিন্ন সময়ে নগদ টাকা, কলোনীর পুকুরের মাছ ও গাছ বিক্রি করে মোট প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে। ঘর ভিটা রেজিষ্ট্রি করার নামে দফায় দফায় হত দরিদ্র পরিবার থেকে টাকা নিয়ে তারা আত্মসাৎ করেছে।
চার্চ কলনীর অসহায় পরিবার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা উত্তোলনকারী মামলায় অভিযুক্ত সাইদ ফরাজী বলেন,চার্চ অফ বাংলাদেশ ট্রাস্টির কর্মকর্তারা আমাকে কলোনীর সম্পত্তি রক্ষানাবেক্ষনের জন্য দায়িত্ব দিয়েছে। আমি উক্ত কলোনীর পুকুর সেচ দিয়ে ২৮ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছি। আমি কলোনী থেকে কোন টাকা উত্তোলন কিংবা আত্মসাৎ করিনি।
উপকূলীয় ভোলা জেলার বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ট্রাস্টের সহকারি পরিচালক রাশিদা বেগম এ ব্যপারে জানান, চার্চ কলোনীতে বসবাসরত দরিদ্র অসহায় ৫৪ পরিবারকে স্বাবলম্বী ও আর্থিক পুর্নবাসনে কোস্ট ট্রাস্ট কাজ করছে। চর মানিকা এলাকায় গরীব মানুষকে বিভিন্ন আয় সহায়তা মূলক কর্মসংস্থানে প্রশিক্ষন দিয়ে আসছে। ১৯৯১ সালে চার্চ অব বাংলাদেশ ঘুর্ণিঝড়ে আশ্রয়হীন ৫৪ পরিবারকে পরিচালনার জন্য কোস্ট টাস্টকে ৭০ শতাংশ সহ ৪ একর জমি হস্তান্তর করে। দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর যাবৎ সুবিধাভোগী এসব হত দরিদ্র পরিবার ও কোস্ট ট্রাস্ট চার্চ অব বাংলাদেশের সম্পত্তি ভোগদখল করছে।