ভোলার পরানগঞ্জের স্বর্ণ ব্যবসায়ী মানিক প্রায় কোটি টাকা নিয়ে উধাও

এম শাহরিয়ার জিলন ॥
ভোলা পরানগঞ্জ বাজারের বিসমিল্লাহ স্বর্ণ শিল্পালয় মালিক স্বর্ণ ব্যবসায়ী মোঃ নজরুল ইসলাম মানিক কাস্টমারের স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে। শুক্রবার (২১ আগস্ট) দুপুরে মানিক কাস্টমারের স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও বাসার আসবাবপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। কাস্টমাররা শুক্রবার বিকালে মানিকের দোকান তালাবদ্ধ দেখে ফোন করলে তা বন্ধ পায়। এরপর খোঁজ খবর নিয়ে তারা জানতে পারে মানিক সব কিছু নিয়ে পালিয়ে গেছে। কাস্টমারদের কাছ থেকে জানা গেছে মানিকের কাছে স্বর্ণালংকারসহ নগদ টাকা মিলিয়ে প্রায় কোটি টাকা পাওনা রয়েছে তাদের। এ খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে ভুক্তভোগী কাস্টমাররা পরানগঞ্জ বাজারের কাজীপট্টি বিসমিল্লাহ স্বর্ণ শিল্পালয়ের সামনে এসে ঝড়ো হয়। এসময় ভুক্তভোগী কাস্টমাররা তাদের স্বর্ণালংকার ও টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা ছিদ্দিকের ছেলে মোঃ নজরুল ইসলাম মানিক দীর্ঘ ১৬ বছর আগে ভোলার পরানগঞ্জ বাজারে এসে স্বর্ণের ব্যবসা শুরু করে। ব্যবসার সুবাধে মানিক সেখানে বসতি নির্মান ঘরে বসবাস করতে থাকে। দীর্ঘদিন ব্যবসার করার কারণে স্থানীয় মানুষের সাথে মানিকের সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। মানিক প্রথম দিকে পরানগঞ্জ বাজারের আনন্দপট্টি ও পরবর্তীতে কাজী মার্কেটে ব্যবসা শুরু করে। সেখানেই মানিকের ব্যবসার বিস্তার লাভ করে। চারদিকে মানিকের স্বর্ণের ব্যবসার কথা ছড়িয়ে পড়ে। মানিক হয়ে উঠেন পরানগঞ্জ বাজারের বড় স্বর্ণকার। বিশ্বাস করে স্থানীয় পুরুষ-মহিলা মানিকের কাছে স্বর্ণ কিনতে শুরু করে। এছাড়াও মানিকের কাছে স্বর্ণ বন্ধক রাখে অনেক কাস্টমার। ব্যবসার প্রসারের জন্য মানিক কিছু এনজিও এবং স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে থেকে ঋণ গ্রহণ করে। গত কুরআনী ঈদে কাস্টমারের বানাতে দেওয়া ও বন্ধক রাখা স্বর্ণ দেওয়ার কথা থাকলেও মানিক দেই দিচ্ছি বলে তাদেরকে ঘুরাতে থাকে। কাস্টমারের চাপ বেড়ে গেলে শুক্রবার (২১ আগস্ট) মানিক কাস্টমারের এসব স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা নিয়ে সপরিবারে পালিয়ে যায়। মানিকের দোকান তালাবদ্ধ দেখে অনেক কাস্টমার তাকে ফোন দিলে তা বন্ধ পান। এরপর তার বাড়ীতে ও বিভিন্ন যায়গায় খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন মানিক সব কিছু নিয়ে পালিয়ে গেছে। খবরটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে ভুক্তভোগী কাস্টমাররা তার দোকানের কাছে এসে ঝড়ো হয়। এসময় ভুক্তভোগীরা তাদের স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থ ফিরে পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ভুক্তভোগী মোঃ আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ঈদের কিছু দিন আগে মানিকের কাছে আমি ৩ ভরি স্বর্ণ রেখেছি। এগুলো ঈদের পর আমাকে দেওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়াও আমাদের বাড়ীর অনেক লোক তার কাছে স্বর্ণ বানানোর জন্য দিয়েছে এবং বন্ধক রেখেছে। মানিক আমাদের সব কিছু নিয়ে পালিয়ে গেছে। আমাদের স্বর্ণালংকার ফিরে পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
প্রবাসী মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, মানিকের কাছে কোরবানী ঈদের আগে নেকলেস ও রুলি বানানোর জন্য এ লক্ষ পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছি। সেগুলো ঈদের পর আমাকে দেওয়ার কথা। আমি সেগুলো আনতে গেলে আমাকে দেই দিচ্ছি বলে এতোদিন ঘুড়িয়েছে। শুক্রবার রাতে শুনতে পারি মানিক সবকিছু নিয়ে পালিয়ে গেছে। এখন আমি যাতে টাকা ফেরত পেতে পারি সে জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করছি।
ব্যবসায়ী মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, মানিক স্বর্ণকার তার ব্যবসার জন্য আমার কাছে ৫ ভরি স্বর্ণ দার নেয়। সেগুলো ঈদের পরে দেওয়ার কথা। শুক্রবার বিকালে জানতে পারি মানিক সবকিছু নিয়ে গোপনে পালিয়ে গেছে। তার মোবাইলে একাধিকার ফোন করে তা বন্ধ পেয়েছি। আমি যাতে আমার স্বর্ণ ফিরে পেতে পারি সে জন্য পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
ভুক্তভোগী ফারুক মজগুনী, মাইনুদ্দিন মেস্তরী, সেলিম মাঝি, মোঃ আলামিন, লিটন, তাসনুর বেগম, জোসনা বেগমসহ একাধিক কাস্টমার বলেন, আমাদের কষ্টের অর্জিত শেষ সম্বল দিয়ে স্বর্ণকার মানিকের কাছে স্বর্ণালংকার বানানোর জন্য দিয়েছে। কিছু স্বর্ণ তার কাছে বন্ধক রেখেছি। আমাদের বন্ধকের টাকা প্রায় শেষ হয়েছে। আমরা যখন তার কাছ থেকে এগুলো আনার জন্য যেতাম ২/১দিন অপেক্ষা করতে বলে আমাদেরকে ঘুরাতো। শুক্রবার রাতে শুনতে পারি মানিক সব কিছু নিয়ে পালিয়ে গেছে। আমাদের কষ্টের টাকা ও স্বর্ণালংকার যাতে আমরা ফিরে পেতে পারি সে জন্য জেলা পুলিশ সুপারসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করছি।
দোকান মালিক মোঃ মামুন কাজী বলেন, মানিক দীর্ঘ ১২/১৩ বছর আগে আমাদের দোকানঘর ভাড়া নিয়ে স্বর্ণের ব্যবসা শুরু করে। মানুষও তার সাথে লেনদেন করতে থাকে। তার ব্যবসার কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। দিনদিন তার ব্যবসাও বড় হতে থাকে। কিন্তু শুক্রবার দুপুরে মানিক কাস্টমারের সব কিছু নিয়ে পালিয়ে যায়। আমাদেরও প্রায় ৫/৬ মাসের ঘর ভাড়া বকেয়া রয়েছে। সকাল থেকে কাস্টমাররা তার দোকানে এসে ঝড়ো হতে শুরু করে। ভুক্তভোগীরা যাতে তাদের সম্পদ ফিরে পেতে পারে সেজন্য আমি জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
পূর্ব ইলিশা ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আবদুর রহমান হাওলাদার বলেন, কুমিল্লা জেলার নাঙ্গল কোট থানার মান্দাবাজার গ্রামের বাসিন্দা ছিদ্দিক স্বর্ণকারের ছেলে প্রতারক মানিক আমার বাড়ীর কাছে বসতি স্থাপন করে পরানগঞ্জ বাজারে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত স্বর্ণের ব্যবসা করে আসছে। তার কাছে আমি কিছু স্বর্ণ বানানোর জন্য দিয়েছি। সেগুলো কিছুদিনের মধ্যে দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু শুক্রবার হঠাৎ করে মানিক সব কিছু নিয়ে পালিয়ে যায়। খবরটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা আমার কাছে আসে। ভুক্তভোগীরা যাতে তাদের স্বর্ণ ও টাকা ফেরত পেতে পারে সে জন্য পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এই বিষয়ে ভোলা সদর থানার ওসি এনায়েত হোসেন জানান, আমি বিষয়টি স্থানীয় মেম্বারের কাছে শুনেছি। তবে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করবো।

ফেসবুকে লাইক দিন

আর্কাইভ

ডিসেম্বর ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« নভেম্বর    
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  

সর্বমোট ভিজিটর

counter
এই সাইটের কোন লেখা অনুমতি ছাড়া কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ!
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।