ভোলায় ভরা মৌসুমে নদীতে নেই ইলিশ, নিদারুন কষ্টে জেলেরা

কাজী মহিবুল্লাহ আযাদ, আমাদের ভোলা.কম।

ভরা মৌসুমে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না। দিন রাত নদীতে জাল ফেলে যে দু’চারটি ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে তাতে খরচের টাকাও উঠছে না। একদিকে মাহাজনের দাদানের টাকা পরিশোধ করতে হবে অপর দিকে বিভিন্ন এনজিও থেকে নেয়া ঋণ, তার উপর রয়েছে সংসারের খরচ। কোন কোন জেলে পরিবারে দু’বেলা দু’মুঠো ভাতও জুটছে না। সব মিলিয়ে জেলেরা রয়েছেন চরম বিপাকে। এ সময় জেলে পল্লীতে যেখানে থাকবে উৎসবের আমেজ সেখানে মেঘনা তেঁতুলিয়া পড়ের পল্লীগুলোতে চলছে হাহাকার।

জেলেরা জানান, এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকেই নদীতে ইলিশ পড়তে শুরু করে। জুন জুলাই হচ্ছে ইলিশের ভরা মৌসুম। এ সময় জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ার কথা। এ সময় প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাবে এই আশায় তারা সারা বছর ধার দেনা করে চলেন। অপেক্ষায় থাকেন এসময়ে ধরা পড়া ইলিশ বিক্রি করেই মহাজনের দাদনের টাকা, পাওনাদারের টাকা এবং এনজিওর ঋণের টাকা শোধ করবেন। কিন্তু এবছর ইলিশ মৌসুমের মাঝামাঝি পার হয়ে গেলেও ইলিশের দেখা না পেয়ে জেলেরা হতাশ।

ভোলা সদরের ইলিশা মাছঘাটের আড়ৎদার আনিস ফরাজি জানান, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। নদীতে প্রচুর পানিও আছে। কিন্তু ইলিশ নেই। ওই ঘাটের জেলে সেলিম জানান, বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ এবং মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিয়ে মাছধরার ট্রলার ও জাল কিনেছেন। কিন্তু নদীতে গিয়ে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। সারাদিন নদীতে জাল ফেলে  দুই চারটি ইলিশ নিয়ে ফিরতে হচ্ছে। এতে খরচের টাকাও উঠছে না। ইলিশা জংশন এলাকার জেলে লিয়াকত মিয়া জানান, এখন জেলেদের পকেটে থাকবে টাকা। ছেলে মেয়েদের মুখে থাকবে হাসি। কিন্ত এখন সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। এখন কেউ আর ধারদেনাও দিতে চাচ্ছে না। ঠিক মত দুই বেলা ভাতও জুটছে না।

নাছির মাঝি এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী আহসান কবির লিটন জানান, দৈনিক যে পরিমান মাছ বেচা কেনা হয় তাতে কর্মচারীর বেতনও হচ্ছে না। মৌসুম শেষে দাদনের টাকা উঠবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। নদীতে মাছ না থাকায় জেলে, আড়ৎদার, পাইকারসহ সকলেই বিপদে আছে। বিশেষ করে জেলেদের অবস্থা খুব করুন। তবে তিনি আশা করছেন হয়তো আগামী দুই এক সপ্তাহ পর নদীতে কিছু ইলিশা মাছ পড়তে পারে।

এদিকে সাধারণ জেলেরা জানান, সরকার বঙ্গোপসাগরে মাছ ধারার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বাংলাদেশের জেলেরা যাচ্ছে না। এই সুযোগে বিদেশী জেলেরা সাগর থেকে অবাদে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য সাগর মোহনা থেকে নদীতে মাছ উঠে আসতে পারছে না বলেও জেলেরা ধারণা করছেন।

ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আজাহারুল ইসলাম জানান, বৃষ্টি কম হওয়ায় নদীতে মাছ কম। বৃষ্টি বাড়ার সাথে সাথে নদীতে ইলিশের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরও জানান, আগস্টের মাঝামাঝি সময় নদীতে প্রচুর ইলিশ পড়বে।

ভোলার সাত উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ লাখ জেলে রয়েছে। এদের মধ্যে নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ১ লাখ ৩২ হাজার ২৬০ জন। তবে আরও জেলেকে নিবন্ধনের আওয়াতায় আনার কাজ প্রক্রিয়াধিন রয়েছে বলেও জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা।

ফেসবুকে লাইক দিন

আর্কাইভ

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  

সর্বমোট ভিজিটর

counter
এই সাইটের কোন লেখা অনুমতি ছাড়া কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ!
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।