সবকিছু জেনে তুই এখন আমাকে ফাঁসিয়েছিস: ডা. সাবরীনা
নিউজ ডেস্ক, আমাদের ভোলা.কম।
জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ারের (জেকেজি) চেয়ারম্যান ডা. সাবরীনা আরিফ ও তার স্বামী প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল চৌধুরীকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
“জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ডা. সাবরীনা তার স্বামী আরিফুল চৌধুরীকে বলেন, ‘সবকিছু জেনে এবং করে তুই এখন আমাকে ফাঁসিয়েছিস।’ এ সময় আরিফুল কিছুক্ষণ চুপ থেকে ডা. সাবরীনাকে বলেন, ‘তুমি তো প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, তোমার কি দায় নেই?’”
দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদে যুক্ত ছিলেন ডিবি পুলিশের এমন একজন কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার এই দাবি করেছেন। তিনি আরো বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে নিয়ে এই দম্পতি একে অপরকে দোষারূপও করেছেন।’
জানা যায়, জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার (জেকেজি) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে করোনার নমুনা সংগ্রহের অনুমতি পায় চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল। কিন্তু ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে প্রতিষ্ঠানটি ট্রেড লাইসেন্স পায় তার ঠিক দুই মাস পর অর্থাৎ ১৬ জুন। কিন্তু ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই দুই মাস ধরে তারা অবৈধভাবে নমুনা সংগ্রহের কাজ করে। আবার এসব নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
গত ২৩ জুন জেকেজির বিরুদ্ধে ‘করোনার নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করে ইচ্ছেমতো রিপোর্ট দেওয়ার’ অভিযোগে তেজগাঁও থানা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানের সময় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল চৌধুরীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জেকেজির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া প্রতারণার মামলার তদন্ত করছে ডিবির তেজগাঁও বিভাগ। গতকাল ডা. সাবরীনা ও আরিফুল চৌধুরী দুজনকেই রিমান্ডে নিয়ে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি।
জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে ডিবির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ‘তাদের দুজনকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সে সময় তারা দুজন একে-অপরকে দোষারোপ করতে থাকেন। তাদের অপরাধের বিষয়ে প্রমাণ হাজির করলে তারা চুপ হয়ে যান। তবে সব শেষে তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করে নেন। স্বীকার না করার কোনো পথ ছিল না। কারণ, আমরা সব ধরনের প্রমাণ হাজির করেছিলাম তাদের সামনে। তারা সরাসরি তাদের অপরাধের কথা স্বীকার না করলেও ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে তাদের সম্পৃক্ততার কথা বলেছেন।’
‘ডা. সাবরীনা বারবারই বলছিলেন, তিনি জেকেজির চেয়ারম্যান ছিলেন না। কিন্তু চেয়ারম্যান থাকার কাগজপত্র হাজির করলেও তিনি তা স্বীকার করেননি। সে সময় সাবরীনা নিজেকে ওই প্রতিষ্ঠানের আহ্বায়ক হিসেবে পরিচয় দেন।’
গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, “জেকেজির অফিস থেকে জব্দ করা ডেস্কটপে দুই হাজারের বেশি কোভিড পরীক্ষার জাল রিপোর্ট পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সাবরীনা তার স্বামীকে বলেন, ‘সবকিছু জেনে এবং করে তুই এখন আমাকে ফাঁসিয়েছিস।’ সে সময় আরিফুল কিছুক্ষণ চুপ থেকে সাবরীনাকে বলেন, ‘তুমি তো চেয়ারম্যান, তোমার কি দায় নেই?’”
উপকমিশনার আরো বলেন, ‘সাবরীনা চেয়ারম্যান থাকার কথা অস্বীকার করলেও চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি জেকেজি থেকে বেতন নিয়েছেন। জেকেজির অফিসের কম্পিউটারের তাদের বেতনের এক্সেল সিটে আমরা সাবরীনার বেতন নেওয়ার তথ্য পেয়েছি। প্রতি মাসে তিনি ত্রিশ হাজার টাকা করে বেতন নিতেন বলে সেখানে দেখাচ্ছে। তবে কোম্পানিটা নিবন্ধিত কি না সেই ব্যাপারে কোনো তথ্য জেকেজির কেউ দেখাতে পারেনি।’
এ ব্যাপারে তেজগাঁও বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মাহমুদ খান প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যে প্রতিষ্ঠানের কোনো নিবন্ধন নেই। ট্রেড লাইসেন্স নাই। সেই প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নমুনা সংগ্রহের অনুমতি দিল? অনুমতি দেওয়ার দুই মাস পর প্রতিষ্ঠানটি ট্রেড লাইসেন্স পেয়েছে। আর সাবরীনা চেয়ারম্যান ছিলেন না সেটা অস্বীকার করলেও তাকে বরখাস্ত করার সময় কিন্তু সিইও তাকে চেয়ারম্যান হিসেবেই বর্ণনা করেছেন।’
সূত্র -দৈনিক আজকের দর্পণ