ভূতুরে বিল নিয়ে বিপাকে ভোলার পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহক
এম শাহরিয়ার জিলন, আমাদের ভোলা.কম।
করোনাভাইরাস মহামারীর সময় দ্বীপজেলা ভোলায় পল্লী বিদ্যুতের অনেক গ্রাহক ‘দেড় থেকে দুই গুণ বেশি (ভূতুরে) বিল নিয়ে বিপাকে’ পড়েছেন। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষ ‘গড় বিলের’ নামে অতিরিক্ত বিল ধরিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। গড় বিল সম্পর্কে বিদ্যুৎ বিলের কপিতে লেখা থাকছে, আপনার অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আপনার গত বছরের একই সময়/একই মাসের বিদ্যুৎ ব্যবহারের ভিত্তিতে গড় বিল প্রণয়ন করা হল। কোনো অসংগতি থাকলে পরবর্তীতে তা সংশোধন/সমন্বয় করা হবে। কিন্তু গ্রাহকরা বলছেন, গড় বিলের চেয়ে তাদের দেড় থেকে দুই গুণ বেশি বিল দেওয়া হয়েছে। তবে ভোলায় যেসব বিলে সমস্যা হয়েছে সেগুলো সমাধান করে দেওয়া হচ্ছে। আরও কোন গ্রাহকের সমস্যা হলে বিদ্যুৎ অফিসে জানালে সেগুলো দ্রুত সমাধান করে দেওয়া হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
ভোলা সদরের ইলিশা ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ শাহাবুদ্দিন বলেন, করোনা দুর্যোগকালীন সময়ে বিদ্যুৎ অফিসের কোন লোক বাসায় এসে রিডিং না দেখে গড় বিলের নামে অতিরিক্ত বিল করায় দুশ্চিন্তায় পড়েছি। করোনার কারণে আয় রোজগার বন্ধ, আবার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল ধরিয়ে দিয়েছে কিভাবে। এখন কিভাবে বিল পরিশোধ করবো।
গ্রাহক মোঃ আনিছুর রহমান বলেন, প্রতিটি বিলে গত বছরের চেয়ে দেড় থেকে দ্বিগুণ বেশি করে দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত বিল নিয়ে আমরা চিন্তায় পড়েছি। করোনার কারণে কাজ কাম বন্ধ। এখন এই বিল কিভাবে পরিশোধ করবো তা বুঝতে পারছি না।
রাজাপুর ইউনিয়নের আলমগীর হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ অফিস কর্তৃপক্ষ করোনার কারণে বাসায় না এসে গড় বিল নামে অতিরিক্ত বিলের বোঝা আমাদের মাথায় চড়িয়ে দিয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর আমাদের বিল দেড়গুন করা হয়েছে। আমরা যেখানে দুবেলা ভাত খেতে হিমশিম খাচ্ছি সেখানে অতিরিক্ত বিলের বোঝা আমাদেরকে ধরিয়ে দেওয়ায় দুচিন্তায় পড়েছি। এখন আমরা এ বিল কিভাবে পরিশোধ করবো। আরও অনেক গ্রাহক এমন অভিযোগ করেছেন।
ভোলা নাগরিক অধিকার ফোরামের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট সাহাদাত শাহিন বলেন, বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বাসায় না গিয়ে গড় বিল নামে যে বিল করেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। করোনার কারণে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে, আয় রোজগার বন্ধ হয়েছে। সেখানে অতিরিক্ত বিলের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। যার ফলে সাধারন মানুষ এই বিদ্যুৎ বিল নিয়ে বিপাকে পড়েছে। যারা এই কাজটি করেছেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে আরইবি চেয়ারম্যান গ্রাহকদের মোবাইল নাম্বারে দুঃখপ্রকাশ করে একটি ম্যাসেজ পাঠিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেন, করোনার কারণে স্বাস্থ্য ঝূকি বিবেচনা করে ঘরে ঘরে গিয়ে মার্চ ও এপ্রিল মাসে প্রকৃত রেডিং গ্রহণ করা সম্ভব না হওয়ায় গড় বিল করার নির্দেশ ছিলো। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বিল করার অভিযোগ রয়েছে। যা আমলে নিয়ে ৩০ জুনের মধ্যে সমন্বয়ের নির্দেশ দিয়েছে এবং এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। দোষীদের শাস্তি দিব। এ জন্য আমি দুঃখিত। ৩০ জুনের মধ্যে বিলম্ব মাশুল ব্যতিত প্রকৃত বিল প্রদানের জন্য অনুরোধ করছি।
এ বিষয়ে ভোলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আবুল বাসার আযাদ বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা মহামারীর কারণে তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার দেখতে পারেননি। সেক্ষেত্রে গত বছরের এপ্রিল মাসের হিসেব অনুযায়ী গড় বিলের মাধ্যমে এ বছরের এপ্রিল মাসের বিল করা হয়েছে। আমাদের ভোলায় তেমন একটা সমস্যা হয়নি। ভোলায় প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ গ্রাহকের মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র ৪৩৫টি অভিযোগ পেয়েছি। সেগুলো আমরা সমাধান করে দিচ্ছি। কোন গ্রাহকের সমস্যা হলে আমাদের জানালে আমরা সমাধান করে দিবো।