কবি মোঃ আঃ কুদদূস এর ” আমাদের মা-বাবা “

আমাদের মাকে আমরা বলতাম ‘তুমি’, বাবাকে ‘আপনি’।
আমাদের মা রাণী এলিজাবেথের মতো দাঁড়াতো বাবার সামনে।
এক বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে অনেক বিষয়ে কথা বলে ফেলতো নিমিষে।
আমাদের মাকে বাবার সামনে পাহাড়ের মতো অটল, অথচ বিনয়ী দেখাতো; যে মাকে মনের অজান্তেই ‘তুমি’ বলে আপন করে নিতাম প্রতিনিয়ত।
আমাদের মা আমাদের থেকে বড় ছিলো, যেন একটি বটবৃক্ষের সমান।
আমাদের মা বয়স-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সবাইকে আগলে রাখতো।
বাবা ছিলেন সূর্যের মতো, আর মা ছিলো চাঁদের মতো।
বাবা ছিলেন অনেকটা সিংহের মত, অন্যায় দেখলে গর্জে উঠতেন।
বাবা ছিলেন অনেকটা বাঘের মতো, তাই কেউ সাহস পেতো না আমাদের উপর সামান্যতম আক্রমন করার, ভয় দেখাবার।
আমাদের মা ছিলো অনেকটা ক্ষিপ্র মুরগীর মতো, পাখার তলদেশে পুরেই বড় করতে ভালোবাসতো সে।
আমাদের মা ছিলো সবটুকু ভরসা- তাই সে থাকতো অবিচল, অটল।
বাবা যখন মাঝে মাঝে দিশেহারা, মা-ই তখন একমাত্র ভরসার স্থল।
আমরা সবাই মিলে বটবৃক্ষের নীচে আশ্রয় নিতাম।
আমাদের মা ‘এর মনটা ছিলো খুবই কোমল, শুভ্রতার আলতো ছোঁয়া।
যখনই আমরা বাড়ি থেকে বের হতাম, দু’হাত তুলে করতো দোয়া।
আমাদের মায়ের মুখের পবিত্র হাসি, যেন প্রভাতের ফুটন্ত একটি সাদা শাপলা।
আমাদের মা ছিলো ধন-ধান্যে ভরা, আমরা কখনোই বাবার কাছে পড়ালেখার খরচ চাইতাম না; মা -ই সব মিটাতো চাওয়ার আগে।
আমাদের মা ছিলো আকাশের মতো উদার- ঘাসফুলের মতো কোমল, ধানক্ষেতের মতো ঐশ্বর্যবতী,আর সাগরের মতো বিশাল হৃদয়ের অধিকারীনি।
আমাদের মায়ের ব্যক্তিত্ব ছিলো আমাদের জন্য পরম অনুকরণীয়।
ব্যক্তিগত জীবনে সে ছিলো একজন সুখী মানুষের প্রতিচ্ছবি।
আমরা মা-বাবাকে সমান্তরালে ভালোবাসতাম, হৃদয়ের পুষ্পাঞ্জলিতে।
৪ জুন ২০১৪
টোকিও, জাপান।