সরকারের অনুমতির পরও ভোলার হাটবাজারে শপিংমল ও দোকানপাট খুলতে পারছে না ব্যবসায়ীরা

এম শাহরিয়ার জিলন ॥
ভোলায় সরকারের অনুমতি দেওয়ার পরও দোকান-পাট ও শপিংমল খুলতে পারছে না হাট-বাজারের ব্যবসায়ীরা। সরকারের অনুমতির পর স্বাস্থ্য বিধি মেনে শপিংমল খোলার চেষ্টা করলে প্রশাসনের বাধার কারণে তা খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ১০ মে থেকে হাট-বাজারগুলোতে কাপুড়ের দোকানগুলো খুলতে না পাড়লেও শহরেরর মার্কেটগুলো খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। হাট-বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা। দীর্ঘদিন ধরে দোকান বন্ধ থাকায় এসব ব্যবসায়ীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সরকার যার যার এলাকার শপিংমল ও দোকান থেকে কেনা-কাটা করার নির্দেশ দিলেও গ্রামের কাপুড়ের দোকানগুলো বন্ধ থাকায় শহরের মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। যার ফলে হুমকি মুখে পড়বে স্বাস্থ্য সুরক্ষা এমনটাই মনে করছেন ভোলা সচেতন মহল।
সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, রোজার ঈদকে সামনে রেখে ১০ মে থেকে দেশের সব দোকান-পাট ও শপিংমল খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। গত সোমবার (৪ মে) বেশ কয়েকটি শর্ত মেনে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সারাদেশের শপিংমলগুলো খোলা রাখা যাবে জানিয়ে জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং সব বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সরকারের নির্দেশ অনুযায়ীয় ভোলা জেলার হাট-বাজারের ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঋণ নিয়ে ও দারদেনা করে ঈদকে সামনে রেখে অধিকাংশ ব্যবসায়ী দোকানে নতুন করে মালামাল তুলেছে। তারা যখন দোকান খুলতে চেষ্টা করছে সে মুহুর্তে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গার্মেন্টস (কাপুড়) ব্যবসায়ীদেরকে দোকান খুলতে দিচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা কারণ জিজ্ঞাসা করলে মোবাইল কোর্ট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে দোকান খোলা যাবে বলে জানায়। একাধিক ব্যবসায়ী দোকান খোলার অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করলেও তাদেরকে অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। দীর্ঘদিন যাবত দোকান বন্ধ থাকার পর সরকারের অনুমতির পরও শপিংমল খুলতে না পারায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে। ব্যবসা বানিজ্য বন্ধ থাকায় মানবতের জীবন যাপন করছে গ্রাম-গঞ্জের এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এদিকে, সরকার যার যার এলাকার শপিংমলগুলো থেকে কেনা-কাটার নির্দেশ দিলেও প্রশাসনের কারণে ব্যবসায়ীরা দোকান খুলতে পারছে না। ভোলার হাট-বাজারগুলোর দোকান-পাট ও শপিংমল বন্ধ থাকায় শহরের মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। যার ফলে করোনাভাইরাস ঝুঁকি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভোলার সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন সরকার যেহেতু স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে সীমিত আকারে শপিংমল খুলে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। সেক্ষেত্রে হাট-বাজারের শপিংমলগুলো যদি বন্ধ না করে খুলে দেওয়া হয় তাহলে যার যার এলাকা থেকে ক্রেতারা কেনা-কাটা করতে পারবে। গ্রাম-গঞ্জের দোকানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হলে শহরের মাকের্টগুলোতে ক্রেতাদের ভীড় বেড়ে যাবে। যার ফলে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, প্রশাসনের উচিৎ স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে হাট-বাজারের শপিংমলগুলো খুলে দেওয়া।
ভোলার পরানগঞ্জ বাজারের ‘হাওলাদার ফ্যাশন হাউজ’ এর মালিক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, নভেল করোনাভাইরাস সারাবিশ্বে মহমারী আকার ধারণ করেছে। আমাদের দেশের সরকার করোনাভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধের লক্ষ্যে দোকান-পাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন দোকান বন্ধ রেখেছি। ঈদ উপলক্ষে সরকার স্বাস্থ্য সুরক্ষার শর্ত মেনে সীমিত আকারে দোকান-পাট ও শপিংমল খোলার অনুমতি দিয়েছে। এ কারণে আমরা ব্যবসায়ীরা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ও দারদেনা করে দোকানে নতুন করে মালামাল তুলেছি। এখন প্রশাসনের লোকজন এসে আমাদেরকে দোকান-পাট খুলতে নিষেধ করছে। তারা বলছে জেলা প্রশাসক স্যারের অনুমতি নিয়ে দোকান খুলতে পারবো। দোকান খোলার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে অনুমতি নেওয়ার আবেদন করেও অনুমতি পাইনি। ঈদ উপলক্ষে যদি আমরা দোকান খুলতে না পারি তাহলে আমাদের পথে বসতে হবে। এখন আমরা ব্যবসায়ীরা উৎকন্ঠা ও হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।
কাপুড় ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন ও নাহিদ হাওলাদার বলেন, ঈদকে সামনে রেখে ১০ মে থেকে সরকার আমাদেরকে শর্ত মেনে দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছে। আমরা যখন দোকান খোলার চেষ্টা করেছি তখন প্রশাসনের লোকজন এসে আমাদেরকে বলে জেলা প্রশাসক স্যারের অনুমতি লাগবে। দীর্ঘদিন যাবৎ দোকান বন্ধ থাকায় আমরা মানবেতর জীবন যাপন করছি। এখন যদি দোকান খুলতে না পারি তাহলে আমাদের কাপড়গুলো নষ্ট হয়ে যাবে। আমাদের পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
কাপড় ব্যবসায়ী মোঃ শরিফ হোসেন বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন আমাদের দোকানপাট বন্ধ থাকায় আমরা এখন মানবেতন জীবন যাপন করছি। ঈদ উপলক্ষে সরকার ১০ মে থেকে শপিংমল খোলার অনুমতি দিলে আমরা শর্ত মেনে দোকান খোলার চেষ্টা করেও প্রশাসনের কারণে খুলতে পারছি না। কিন্তু শহরের মার্কেটগুলো খুলে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করছে। আমাদেরকে বলা হয়েছে দোকান খুলতে হলে জেলা প্রশাসক স্যারের অনুমতি লাগবে। আমরা অনুমতি আনতে গিয়ে অনুমতি পাইনি। এখন যদি দোকান খুলতে না পারি তাহলে আমাদের কাপড়-চোপড়গুলো নষ্ট হয়ে যাবে। বর্তমানে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই কষ্টে জীবন-যাপন করছি।
ইয়ূথ পাওয়ার ইন বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী আদিল হোসেন তপু বলেন, সরকার যেহেতু সীমিত আকারে শপিংমল ও দোকানপাট শর্ত সাপেক্ষে খোলার অনুমতি দিয়েছে সেহেতু হাট-বাজারের দোকানগুলো খুলে দেওয়া উচিত। তাহলে শহরে মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের চাপ কম হবে। আর যদি শহরের ক্রেতাদের ভীড় বেড়ে যায় তাহলে করোনাভাইরাসের ঝুকি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে। তাই শর্ত সাপেক্ষে হাট-বাজারের শপিংমলগুলো খুলে দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এডভোকেট নজরুল হক অনু বলেন, গণমাধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী আমরা জানতে পেরেছি সরকার দোকান-পাট ও শপিংমল খোলার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু জেলা পর্যায়ে কিংবা গ্রাম পর্যায়ে দোকান খুলতে হলে জেলা প্রশাসনের যে অনুমতি লাগবে এমন কথা শুনেনি। তারপরও জেলা প্রশাসন যদি অনুমতির নামে দোকান খুলতে বাধা দেয় তাহলে জনগনের উচিৎ সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট বিচার চাওয়া। তবে সাধারণত আমরা বুঝি এজন্য অনুমতির প্রয়োজন নেই। তবে কেউ যদি শর্ত ভঙ্গ করে তাহলে স্থানীয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।
ভোলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আলহাজ্ব মু. শওকাত হোসেন বলেন, গ্রামের দোকান-পাট বন্ধ করে দিয়ে শহরের কিছু মার্কেট খুলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে গ্রামের মানুষগুলো কেনা-কাটার প্রয়োজনে শহরমুখী হবে। যার ফলে করোনাভাইরাসের ঝূঁকি মারাত্মকভাবে বেড়ে যাবে। সরকারের উচিৎ জনসমাগম ও ভীড় কমাতে হাট-বাজারের দোকানগুলো সীমিত আকারে খুলে দেওয়া। তাহলে কিছুটা হলেও জনসমাগম কমে যাবে।
নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জিমরান বলেন, সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করার জন্য জেলা প্রশাসনে বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করছে। স্বাস্থ্য বিধি যাতে মেনে চলে সে জন্য আমরা অভিযান পরিচালনা করে মানুষকে সচেতন করছি। সামাজিক দূরত্ব যারা মানছে না তাদেরকে আমরা জমিরানা করছি এবং অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি। শপিংমল কিংবা যেসব সামগ্রী মানুষের খুবই জরুরী প্রয়োজন না সেসব দোকান খুলতে হলে জেলা প্রশাসনের অনুমতি লাগবে। সরকার যে শর্ত দিয়েছে অনুমতি নিয়ে সেই শর্ত অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা দোকান খুলতে পারবে। অনুমতি ছাড়া কেউ দোকান খুলতে পারবে না।
জেলা প্রশাসক মোঃ মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, দোকান কিংবা মার্কেট খোলার ব্যাপারে অবশ্যই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুমতি নিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যারা আবেদন করেছে তাদেরকে শর্ত সাপেক্ষে দোকান করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সময় শেষ হওয়ার পর যারা এসেছে তাদেরকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। দোকান-পাট ও শপিংমল খোলা থাকবে না বন্ধ থাকবে এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য আমাদেরকে এখন এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আর্কাইভ

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  

সর্বমোট ভিজিটর

counter
এই সাইটের কোন লেখা অনুমতি ছাড়া কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ!
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।