ডায়াবেটিস রোগীর রোযা
![](https://amaderbhola.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
নিউজ ডেস্ক , আমাদের ভোলা.কম।
সামনের মাসেই আসছে মাহে রমজান।রোজার মাসে মুসলিম সম্প্রদায়ের সবাই রোজা রাখবেন।এর মধ্যে হাজার হাজার মুসলিম আছেন যাদের ডায়াবেটিস আছে এবং তারা সন্দিহান রোজার মাসে তাদের ঠিক কিভাবে তারা রোজা রেখে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখবে।কারণ ডায়াবেটিসের রোগীরা খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ও ওষুধপথ্যের নিখুঁত সময়সূচি ও নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলেন। তাই রমজান মাসে তাঁদের দৈনন্দিন সময়সূচিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হয়। খাবারের নতুন সময়সূচির সঙ্গে পরিবর্তিত হয় ওষুধ বা ইনসুলিনের মাত্রা ও সময়।
তাই আজকে কিছু তথ্য দেয়ার চেষ্টা করব যা ডায়াবেটিস রোগীদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
★প্রথমেই বলে নিই, ডায়াবেটিস রোগী রোযার সময় যেসব ঝুঁকির সম্মুখিন হতে পারেঃ
#হাইপোগ্লাইসেমিয়াঃ গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়া (<৩.৯ মিলিমোল/লিটার)
#হাইপারগ্লাইসেমিয়াঃ গ্লুকোজের মাত্রা বেশী হওয়া, কিটোএসিডোসিস ও হাইপারঅসমোলার স্টেট
#রক্তের মধ্যে ফ্যাট বা চর্বি অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়া
#ওজন বেড়ে যাওয়াঃ অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ, কম চলাফেরা ও শারীরিক পরিশ্রম কম করার কারণে
#পানিশূন্যতা, রক্ত জমাট বেঁধে রক্তনালী বন্ধ হয়ে যাওয়া
#শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের (যেমন-হার্ট, কিডনি, লিভার) কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া।
★সব ডায়াবেটিস রোগীরাই কী রোযা রাখতে পারবে?উপরোক্ত সমস্যা এড়িয়ে চলা যায় কীভাবে
কিছু কিছু রোগী আছেন যারা অতি ঝুকিপূর্ণ এবং কিছু রোগী আছেন যারা মাঝারি ঝুকিপূর্ণ।এই দুই গ্রুপ এর রোগীদের কিছু নির্ধারিত নিয়ম মেনে রোযা রাখার জন্য বলা হয়।
এখন আসি কীভাবে বোঝা যাবে কে মাঝারি আর কে অতিরিক্ত ঝুকিপূর্ণ। এজন্য কিছু উপায় আছেঃ
☞অতি ঝুকিপূর্ণঃ
*বিগত ৩ মাসের মধ্যে গ্লুকোজ অতিরিক্ত কমে গিয়েছিল যাদের, বা অতিরিক্ত শক থেকে কোমায় কখনো চলে গিয়েছিলেন এমন পূর্ব ঘটনা আছে যাদের।
*৩ মাসের মধ্যে কিটোএডোসিস / হাইপার অসমোলার অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন এমন রোগী।
*অনিয়ন্ত্রিত টাইপ ১ ডায়াবেটিস
*গর্ভবতী মা যাদের আগে থেকেই টাইপ ২ ডায়াবেটিস আছে, অথবা গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হয়েছে এবং ইনসুলিন / সালফোনাইলইউরিয়া ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা পাচ্ছেন।
*দীর্ঘমেয়াদি ডায়ালাইসিসের রোগী অথবা কিডনী রোগ খুবই গুরুতর পর্যায়ে আছে এমন রোগী (স্টেজ ৪ ও ৫)।
*ঘনঘন গ্লুকোজ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়।গ্লুকোজ অতিরিক্ত কমে গেলেও কোনো উপসর্গ হয় না
*যাঁরা দিনে তিন বা ততোধিকবার ইনসুলিন গ্রহণ করেন।
*গুরুতর রক্তনালীর রোগ, যেমন, হার্ট-অ্যাটাক, স্ট্রোক
ভগ্ন স্বাস্থ্যের অতিবৃদ্ধ রোগী
☞মাঝারি ঝুকিপূর্ণঃ
*দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত টাইপ ২ ডায়াবেটিস
*নিয়ন্ত্রিত টাইপ ১ ডায়াবেটিস
*নিয়ন্ত্রিত টাইপ ২ ডায়াবেটিস যারা দিনে অনেকবার ইনসুলিন নেন বা প্রিমিক্সকড ইনসুলিন নেন
*গর্ভবতী টাইপ ২ ডায়াবেটিস অথবা গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস, যিনি শুধু খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করেন বা মেটফরমিন গ্রহণ করেন
*কিডনী রোগ স্টেজ-৩
*স্থিতিশীল রক্তনালীর রোগ (আগের স্ট্রোক বা হৃদরোগ)
*ডায়াবেটিস ছাড়া অন্যান্য রোগ যা ঝুঁকি বৃদ্ধির কারণ হতে পারে
*সজ্ঞানতার (cognitive) মাত্রা ব্যহত করতে পারে এমন ওষুধ গ্রহণকারী।
★এই দুই গ্রুপের রোগীদের রোযা রাখতে হলে নূন্যতম নিচের বিষয়গুলো ঠিক রাখা জরুরীঃ
*ডায়াবেটিসে রোজা রাখা সম্পর্কে কাঠামোবদ্ধ প্রশিক্ষণ লাভ করতে হবে
*একজন চিকিৎসক টীমের তত্বাবধানে থাকতে হবে
*গ্লুকোমিটারে নিয়মিত রক্তের সুগার পরিমাপ করতে হবে
*রোজা শুরুর আগে এবং রোজার সময় রক্তের সুগারের পরিমাপ অনুযায়ী নির্দেশনামত ওষুধ সমন্বয় করতে হবে
*রক্তের সুগারের অতি-স্বল্পতা বা অতি-আধিক্যে রোজা ভেঙ্গে ফেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে
*বারবার রক্তের সুগারের অতি-স্বল্পতা বা অতি-আধিক্য হলে অথবা রোজা অবস্থায় অন্যান্য রোগ বেড়ে গেলে পরবর্তী রোজা আর না রাখার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
★ডায়াবেটিসের রোগী, যাদের রোজা রাখা কম বা মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণঃ যাদের ডায়বেটিস টাইপ-২ ধরণের এবং শুধু জীবনযাত্রার পরিবর্তন বা নীচে উল্লেখিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আছে-
● মেটফরমিন
● একারবোজ
● পায়োগ্লিটাজোন
● গ্লিক্লাজাইড
● গ্লিপ্টিন বা লিরাগ্লুটাইড
● এমপাগ্লিফ্লোজিন, ডাপাগ্লিফ্লোজিন, কানাগ্লিফোজিন
● ইনসুলিন ডিগ্লুডেগ, গ্লারজিন, ডিটিমির।
এই গ্রুপের রোগী রোজা রাখতে চাইলে নীচের পরামর্শ ও শর্ত মানতে হবেঃ
*ডায়াবেটিসে রোজা রাখা সম্পর্কে কাঠামোবদ্ধ প্রশিক্ষণ লাভ করতে হবে
*গ্লুকোমিটারে নিয়মিত রক্তের সুগার পরিমাপ করতে হবে
*রোজা শুরুর আগে এবং রোজার সময় রক্তের সুগারের পরিমাপ অনুযায়ী নির্দেশনামত ওষুধ সমন্বয় করতে হবে।
★জেনে রাখা দরকার কি কি উপকারীতা আছে রোযা রাখলেঃ
*সম্প্রতি গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে যে রোযা স্টোমাক(পাকস্থলীর) ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
*রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে,এতে করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
*রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।
*পরিপাক তন্ত্র ও লিভার এর জটিলতা প্রতিরোধ করে।
*ওজন কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।এজন্য অতিরিক্ত ওজন যাদের তাদেরকে চিকিৎসকেরা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এর জন্য বলে থাকেন।
*রক্তের গ্লুকোজমাত্রা কমায় এটি, ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা কমাতে সাহায্য করে এটি।
*শরীর ভেতরের বিভিন্ন ধরণের প্রদাহজনিত জটিলতা প্রতিরোধ করে এটি।
*মস্তিস্ক ও নার্ভের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
রোযা রাখার উপকারিতা ত আছেই, সাথে এটি একটি ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের ব্যাপার।তাই যারা ডায়াবেটিস রোগী আছেন তাদের উচিত অন্তত তিনমাস আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়া কিন্ত যারা এখনো প্রস্তুতি নেন নাই তারা ঝুকিপূর্ণ কিনা তা পরীক্ষা করুন এবং চিকিৎসক এর সাথে যোগাযোগ করুন।
যেসব বিষয়গুলো ঝুঁকিনির্ধারণ এর জন্য বিবেচনা করবেন সেগুলো হলোঃ
● রোগীর ডায়াবেটিসের ধরণ (টাইপ ১, ২ বা অন্য কোন ধরণ)
● মহিলা রোগী হলে গর্ভবতী কি না
● খাদ্যাভাস, কাজের ধরণ
● কী ধরণের চিকিৎসা পাচ্ছেনঃ খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও শরীরচর্চা, মুখে খাবার ঔষধ (কোন গ্রুপের), ইনসুলিন (কোন ইনসুলিন, কতবার)
● ব্লাড সুগারের রেকর্ডঃ রোগী বাড়িতে নিজে সুগার নিয়মিত মেপে থাকলে সেই রেকর্ড, ল্যাবের পরীক্ষার রিপোর্ট, হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা অতিরিক্ত হাইপারগ্লাইসেমিয়ার ইতিহাস, হাসপাতালে ভর্তি এবং চিকিতসার ইতিহাস, কিটোএসিডোসিসের ইতিহাস
● ডায়াবেটিস জনিত জটিলতাঃ কিডনী, হার্ট, ব্রেনস্ট্রোক, অন্যান্য
● অন্যান্য রোগঃ মস্তিষ্ক, লিভার, ফুসফুস, ও খাদ্যনালির রোগ, পেপটিক আলসার, মানসিক রোগ
● অন্যান্য রোগের জন্য প্রতিদিন সেব্য ওষুধ
● আগের রমজানের সময় বা অন্য কোন সময় রোজা রেখে থাকলে সেই সময়কালের অভিজ্ঞতা
● যে সকল পরীক্ষা করা যেতে পারেঃ Blood Glucose, HbA1c, Serum Creatinine, SGPT, Urine R/E
প্রয়োজনমাফিক অন্যান্য পরীক্ষাদি।
আপনি যদি নিজেকে ঝুকিপূর্ণ মনে করেন তবে আপনার চিকিৎসক এর পরামর্শ নিন তার পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা গ্রহণ করুন।