ভোলায় সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রনে এলপি গ্যাস,সাধারণ ব্যবসায়ীরা জিম্মি, দুর্ভোগে ভোক্তারা
সাহাদাত শাহিন , আমাদের ভোলা.কম।
ভোলায় গুটি কয়েক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রনে এলপি গ্যাস। সমিতির নাম দিয়ে এলপি গ্যাসের সাধারন ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে কোম্পানির নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রতি সিলিন্ডারে ৮০ থেকে ১০০ টাকা বেশি মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। বিক্রিত টাকা থেকে সমিতির চাঁদার নামে প্রতি সিলিন্ডারে ৪৫ টাকা কেটে নওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঐ সিন্ডিকেট।
ভোলার গ্যাস ব্যবসায়ী স্বপন বাংলাবাজারের তোফায়েল মেম্বার, বোরহানউদ্দিনের মাকসুদ চৌধুরী, লালমোহনের সোহাগ ও চরফ্যাশনের হুমায়ুনের নেতৃত্বাধিন এই সিন্ডিকেট সব কোম্পানির ডিলারদেরকে নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছে। কোন এলপি গ্যাস কোম্পানির ডিলার স্বাধীনভাবে কোম্পানির নির্ধারিত মূল্যে গ্যাস বিক্রি করতে পারছে না।
শনিবারের মধ্যে সব কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডার এই সিন্ডিকেটের নিজস্ব গোডাউনে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য সকল ডিলারদেরকে ম্যাসেজ দেওয়া হয়েছে। তাদের আদেশ অমান্য করলে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এলপি গ্যাসের একাধিক কোম্পানির ডিলারদের সাথে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে ভোলার জেলা প্রশাসক মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, এলপি গ্যাসের এই সিন্ডিকেটের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টির তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো আমরা।
বিএম এবং টোটাল গ্যাস ডিলার অসীম সাহা জানান, আমরা কোম্পানির নিয়ম মেনে স্বাধীনভাবে কোম্পানির নির্ধারিত মূল্যে গ্যাস বিক্রি করতে চাই। কতিপয় ব্যক্তি এলপি গ্যাস ব্যবসায়ী সমিতির নাম দিয়ে আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা সব কোম্পানির গ্যাস তাদের নির্ধারিত গোডাউনে রেখে। তাদের মাধ্যমে বিক্রির জন্য চাপ দিচ্ছে। তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমাদেরকে ভোলায় গ্যাস এনে স্বাধীনভাবে বিক্রি করতে আমাদেরকে বাঁধা দিচ্ছে। তাদের অনুমতি ছাড়া ভোলা লাহারহাট ফেরীতে গ্যাসবাহী কোন গাড়ি উঠতে দেওয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমার কোম্পানির বিএম গ্যাসের প্রতিটি সিলিন্ডারের পাইকারী মূল্য ৮৮০ টাকা সেখানে ঐ সিন্ডিকেট ৯৫০ টাকা নির্ধারন করেছে। আমি তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গত ১২ মার্চ (বৃহস্পতিবার) আমার গ্যাসবাহী গাড়ি লাহারহাট ফেরীতে উঠতে বাধা দেয় ঐ সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
খুচরা বিক্রেতা ভোলা নতুন বাজারের মালিক হাবিবুর রহমান জানান, সমিতির নামে ঐ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বলায়। আমাকে তারা গ্যাস বিক্রি করতে দিচ্ছে না।
একই ভাবে সেনা ও ডেল্টা গ্যাসের ডিলার নিজাম উদ্দিন, জি-গ্যাসের ডিলার আলী আশরাফ, পেট্রোম্যাক্স এর ডিলার আরিফ হোসেন, জিএমআই এর ডিলার সুমন তালুকদার, চরফ্যাশনের জিএমআই এর ডিলার সোহেল, বসুন্ধারা গ্যাসের চরফ্যাশনের ডিলার রাসেলসহ অন্যান্য সাধারণ ব্যবসায়ীরা জানান, চার পাঁচজন ব্যক্তির কাছে আমরা জিম্মি থাকতে চাই না। সমিতির নাম দিয়ে ঐ সিন্ডিকেট গ্যাসের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণ ক্রেতাদেরকে বিপাকে ফেলতে চায়। আমরা কোম্পানির নির্ধারিত মূল্যে গ্যাস বিক্রির জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা চাই।
এ ব্যাপারে গ্যাস সিন্ডিকেটের অন্যতম নেতা এবং প্রমিতা এবং ডেলটা গ্যাসের ডিলার মো: স্বপন অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, বাজারে কোন গ্যাসের সংকট নেই। আমরা সবাই মিলে যদি একটা নির্ধারিত দামে গ্যাস বিক্রি করি তবে ক্ষতি কী? অতিরিক্ত দামের ব্যাপারে তিনি বলেন, মোংলা, চট্টগ্রামসহ দেশের দূর দূড়ান্ত থেকে গ্যাস আনতে হয় তাতে পরিবহন ব্যয় অনেক বেশি হয়। সেটা পোষানোর জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্যাস আনতে বাঁধা প্রসঙ্গে বলেন, গ্যাস পরিবহনের ক্ষেত্রে যাতে সতর্কতা অবলম্বন করা হয় এই জন্য আমরা এই ব্যবস্থা গ্রহন করছি। তাদের সমিতি রেজিস্টার নয় বলেও তিনি স্বীকার করেন।
ভোলার নাগরিক অধিকার ফোরামের সভাপতি কাজল কৌশিক বলেন, গ্যাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ পন্য ঐ সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রনে থাকলে সাধারন ভোক্তারা মারাতœকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানাই।
এ ব্যাপারে ভোলা জেলা প্রশাসক মাসুদ আলম ছিদ্দিক সিন্ডিকেটের ব্যাপারে বলেন, আমি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিচ্ছি।