কুমিল্লার বুড়িচংয়ে স্যালাইনের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে স্বামীকে হত্যা করার অভিযোগে স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার নিহত আব্দুল গফুর (৭০) বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের কোরপাই কাকিয়ারচর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে।
গ্রেফতার গফুরের স্ত্রী সাফিয়া বেগম (৬৫) হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
৪০ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল এ দম্পতির। তবে সাফিয়ার দাবি বিয়ের পর থেকেই স্বামী নির্যাতন করে আসছিলেন তাকে। এর জের ধরেই তিনি এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।
সূত্র জানায়, শুক্রবার সকাল ৯টায় শারীরিক দুর্বলতার জন্য স্থানীয় ডাক্তার মো. খোরশেদ আলমকে দিয়ে স্যালাইন দেয়া হয়। দুপুর ২টায় আব্দুল গফুরের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তার চিৎকারে ওই ডাক্তারসহ স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে প্রথমে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে কুমেক হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে রাত ৮টায় মৃত্যু হয় তার।
ডাক্তার খোরশেদ আলম জানান, আব্দুল গফুর সকালে এসে জানান শারীরিক দুর্বলতার কারণে কৃষিকাজসহ অন্যান্য কাজ করতে পারছেন না। তখন তিনি প্রয়োজনীয় ভিটামিনসহ সুস্থতার জন্য একটি স্যালাইন তার ঘরে নিয়ে পুশ করা হয়। দুপুরে তার চিৎকার শুনে বাড়ির ৩-৪ জনসহ তাকে উদ্ধার করে চান্দিনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে গাড়িতে আব্দুল গফুর জানান- তার স্ত্রী শাফিয়া খাতুন প্রথমে তার মুখে ঢেলে বিষ খাওয়াতে চেষ্টা করে পরে ইনজেকশনের মাধ্যমে বিষটি তার শরীরে দেন।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ স্যালাইন, ইনজেকশন ও বিষের বোতল সংগ্রহ করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে নেয়া ঋণের বই উদ্ধার করেছে।
শনিবার আব্দুল গফুরের বড় মেয়ে রুবি আক্তার এই ঘটনায় বাদী হয়ে মাকে আসামি করে বুড়িচং থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
সূত্র আরও জানায়, পারিবারিক কলহের জেরেই এই ঘটনার সূত্রপাত। ৪ সন্তানের জনক গফুর মিয়া কৃষিকাজ করতেন। দুই ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে দুই ছেলেই বিদেশ থাকেন। বড় ছেলে জাহিদুল ওমান থাকেন আর ছোট ছেলে জুয়েল মালয়েশিয়া থাকেন।
দুই মেয়ে রুবিকে দাউদকান্দি উপজেলার বরকীকান্দি আর সুমিকে চান্দিনা উপজেলার বেলাশ্বর গ্রামে বিয়ে দেয়া হয়।
স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, সাফিয়া বেগমের স্বামী গফুর মিয়া সহজ-সরল একজন কৃষক। তার স্ত্রীও সহজ-সরল। তবে তার স্ত্রী বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে অনেক টাকা ঋণ করেছেন। শুক্রবার সকালে স্থানীয় আব্দুল মালেকের ছেলে ডাক্তার খোরশেদ আলমের কাছে গফুর মিয়া শারীরিক দুর্বলতা নিয়ে গেলে ডাক্তার বাসায় গিয়ে তাকে ভিটামিন, ক্যালসিয়ামসহ স্যালাইন দেন। সেই স্যালাইনে তার স্ত্রী সিরিজের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করেন।
তবে স্থানীয়দের দাবি, নিহতের মেয়েরা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। মহিলা অনেক সহজ-সরল। তিনি এই কাজ করতে পারে না।
নিহতের স্ত্রীর দাবি, আমি নিজে ৫০ টাকা দিয়ে বিষ কিনেছি এবং ছোট একটি বোতল থেকে স্যালাইনে দিয়ে দিয়েছি।
বুড়িচং থানার ওসি আকুল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আমি খবর পেয়ে কুমেক হাসপাতালে আসি। যেহেতু ব্যক্তিটি মারা গেছে সেহেতু মেডিকেল টার্ম। মেডিকেলের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।
স্থানীয়রা ধারণা করছেন, তার স্ত্রী ও মেয়ে স্যালাইনের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগ করেছে। হাসপাতালে এসে নিহতের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বললে তিনি অসংলগ্ন কথা বলেন। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনায় শনিবার বুড়িচং থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে