অপহরণের পর ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি, দুই পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেফতার
অনলাইন ডেস্ক, আমাদের ভোলা.কম।
এই যুবকদের ৩ জনকে গ্রেফতার করে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে দুই পুলিশ কর্মকর্তা। ইনসেটে গ্রেফতারকৃত এএসআই মামুন। ছবিঃ ইত্তেফাক।
মির্জাপুর ও কালিয়াকৈর থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তিন যুবককে অপহরণ করে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছে। এ অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় প্রথমে তাদের প্রত্যাহার ও পরে আজ শুক্রবার তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
দুই পুলিশ কর্মকর্তার এমন অপকর্মের কারণে মির্জাপুর ও কালিয়াকৈরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ধেরুয়া উড়াল সেতু ও গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর এলাকায় এ ঘটনা গত তিন দিন ধরে ‘টক অব দা টাউনে’ পরিণত হয়েছে। অপহরণের অভিযোগে বৃহস্পতিবার মির্জাপুর থানার এএসআই মুসরাফিকুর রহমান ও কালিয়াকৈর থানার এএসআই আব্দুল্লাহ আল মামুনকে প্রত্যাহার করা হয়। এর আগে মির্জাপুর থানার এসআই মো. সোহেল কুদ্দুছকে বহুরিয়া এলাকায় এক প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতির অভিযোগে প্রত্যাহার হয়েছে।
অপহৃতরা হলেন, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বড়ইবাড়ি এলাকার হান্নান সরকারের ছেলে রায়হান সরকার (২২), একই এলাকার লতিফ সরকারের ছেলে লাবিব হোসেন (২১) ও শ্রীপুর উপজেলার চন্নাপাড়া এলাকার মজিবুর রহমানের ছেলে নওশাদ ইসলাম ওরফে মাহফিন (২৪)।
শুক্রবার অপহৃত ও তাদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে রায়হান সরকার, লাবিব উদ্দিন, নওশাদ ইসলাম, তরিবুল্লাহ ও রাকিবুল রহমান বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার জন্য একটি প্রাইভেটকার নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। পরে তারা গাড়িতে গ্যাস নেওয়ার জন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর এলাকায় শিলা-বৃষ্টি ফিলিং স্টেশনে যান। গ্যাস নেওয়ার সময় তরিকুল্লাহ ও রাকিবুল রহমান গাড়ি থেকে নেমে পাশের দোকানে চা খেতে যান। গ্যাস নিয়ে তাদের গাড়িটি ফিলিং স্টেশন থেকে একটু এগিয়ে যায়।
এ সময় সাদা পোশাকে কালিয়াকৈর থানার এএসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন ব্যাক্তিগত গাড়ি নিয়ে ও মির্জাপুর থানার এএসআই মুসরাফিকুর রহমানসহ ৩-৪ জন লোক একটি হাইয়েস মডেলের মাইক্রো নিয়ে ওই যুবকদের গাড়ির গতিরোধ করে। পরে গাড়ি থেকে রায়হান মিয়া, লাবিব উদ্দিন ও নওশাদ ইসলাম জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায়। এ সময় চা খেতে যাওয়া বাকি দুই বন্ধু রক্ষা পায়।
পরে ওই তিন বন্ধুকে নিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ধেরুয়া এলাকায় নির্মানাধীন উড়াল সেতুর নিচে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে তিন বন্ধুকে মুক্তি দেওয়ার শর্তে ৩০ লাখ টাকা দাবি করে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের দাবিকৃত টাকা না দিলে ক্রসফায়ার দিয়ে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়।
পরে বেশ কিছু সময় তাদের সঙ্গে টাকা নিয়ে দেন-দরবার হয়। এক পর্যায়ে ওই দুই এএসআই তাদের জানায় ১০ লাখ টাকা দিলেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।
এদিকে তাদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া তরিবুল্লাহ ও রাকিবুল রহমান মুঠোফোনে তাদের পরিবার এবং মির্জাপুর ও কালিয়াকৈর থানা পুলিশকে ঘটনাটি জানায়। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে মির্জাপুর ও কালিয়াকৈর থানার ওসি তাদের উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চালান।
পরে দুই থানার পুলিশের সহযোগিতায় তাদের ওই দিন রাত ৮টার দিকে উদ্ধার করে প্রথমে মির্জাপুর থানায় এবং পরে রাত ১২টার দিকে কালিয়াকৈর থানায় নিয়ে আসা হয়।
ঘটনাটি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে জানাজানি হলে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কালিয়াকৈর থানার এএসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মির্জাপুর থানার এএসআই মুসরাফিকুর রহমানকে প্রত্যাহার করে গাজীপুর ও টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
অপহরণের কবল থেকে উদ্ধার হওয়া রায়হান সরকার জানান, তারা পাঁচ বন্ধু বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়িতে গ্যাস নেওয়ার সময় ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ আরো অজ্ঞাত কয়েকজন তাদের ধরে নিয়ে যায়। পরে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয় তাদের কাছে। টাকা না দিলে ক্রসফায়ার নিয়ে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়।’
অপর দিকে এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর থানার সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মির্জাপুর থানার উপ পরিদর্শক (এএসআই) মুসরাফিকুর রহমান এক সময় গাজীপুর জেলায় গোয়েন্দা পুলিশে এক সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই সময় থেকে তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। ডিবিতে দায়িত্ব পালনের সময় তারা এলাকার বহু নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করার অনেক অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
এএসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি মুক্তিপণ চাইনি, মুক্তিপণ চেয়েছে মির্জাপুর থানা পুলিশ। আমি তাদের সহযোগিতা করেছি। তাদের সহযোগিতা করাটাই আমার ভুল হয়েছে।’
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় ও গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর ওই দুই এএসআইকে প্রত্যাহার করে গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। ঘটনার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় আজ শুক্রবার তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তদন্ত করে রিপোর্ট পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’
(সূত্র – দৈনিক ইওেফাক) http://www.ittefaq.com.bd/wholecountry/26880/%E0%A6%85%E0%A6%AA%E0%A6%B9%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%B0-%E0%A7%A9%E0%A7%A6-%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%96-%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE-%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A6%A3-%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BF-%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%87-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%B6-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%AB%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0