অধ্যক্ষ পদ শূন্য থাকায় নানা সমস্যায় ভুগছে ভোলার কবি মোজাম্মেল হক মহিলা কলেজ

ভোলার বাণী রিপোর্ট ॥ ভোলা সদর উপজেলার পরানগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে কবি মোজাম্মেল হক মহিলা কলেজ ভবনে তালা লাগিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি করেছেন এমন অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (১২ জানুয়ারী) সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে।

সূত্রে জানা গেছে, ভোলা সদর উপজেলাধীন পরানগঞ্জ এলাকায় হালিমা খাতুন গার্লস স্কুল এন্ড কলেজটি গত ২৩/০৩/২০২১ইং তারিখের বরিশাল বোর্ডের পত্রের আলোকে বিভাজন প্রক্রিয়ায় যথাক্রমে কবি মোজাম্মেল হক মহিলা কলেজ ও হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে আত্মপ্রকাশ করে। বিভাজন হওয়ার পরও হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক টিপু সুলতানকে একই সাথে কবি মোজাম্মেল হক মহিলা কলেজ ও হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তের আলোকে। যা ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা বিধির মারাত্মক লঙ্গন। বিষয়টি বরিশাল বোর্ডের দৃষ্টিগোচর হলে বোর্ড টিপু সুলতানকে কারণ দর্শানোর চিঠি প্রদান করে। যার স্মারক নং- বশিবো/কলেজ/অনু ২০২১/৬৩৩। কারণ দর্শানোর চিঠি প্রাপ্তির পর ৩১/১০/২০২১ইং তারিখে গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত মোতাবেক কলেজ শাখার ১০ম ক্রমের শিক্ষক আবুল কাশেমকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। যাও ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা বিধির সুস্পষ্ট লঙ্গন।

স্কুল ও কলেজ এর শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলমান থাকায় গত ১৪/১২/২০২১ইং তারিখে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ আবুল কাশেমও তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর থেকে অদ্যাবধি উক্ত প্রতিষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে কাউকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়নি। ফলে উক্ত কলেজের প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক বিভিন্ন কাজে মারাত্মক জটিলতা দেখা গিয়েছে। বিশেষ করে কলেজের ভর্তি, ছাত্রীদের রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্নকরণ, স্বীকৃতি নবায়ন, এডহক কমিটি গঠন সহ নানাবিধ কাজে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।

তাছাড়া কলেজে অধ্যক্ষ না থাকায় উক্ত কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীদের ডিসেম্বর মাসের বেতন শিক্ষক ও কর্মচারীদের নামে জমা হয়নি। বেতন না পেয়ে শিক্ষক ও কর্মচারীগণ বর্তমানে চরম অনিশ্চয়তা ও হতাশার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন।

এদিকে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক টিপু সুলতান ও কলেজ শিক্ষকদের মধ্যে চলছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতানৈক্য। ওই মতানৈক্যের কারণে বুধবার (১২ জানুয়ারী) তারিখেও একটি উদ্ভট পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। স্কুলের টিপু সুলতান নিয়ম বর্হিভূতভাবে কলেজ শিক্ষক ও ছাত্রীদের কলেজ থেকে বের করে দিয়ে তালাবদ্ধ করে দেন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা কলেজ বুঝ নিবা তোমাদের শিক্ষকদের কাছ থেকে। এখানে আর আসবা না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কবি মোজাম্মেল হক মহিলা কলেজের একাধিক ছাত্রী বলেন, আমরা সকালে কলেজে এসে দেখি তালাবদ্ধ কলেজ। পরে টিপু স্যার নিজে কলেজ থেকে আমাদের বের হয়ে যেতে বলেন। তিনি আরো বলেন, আগামীদিন থেকে এখানে তোমরা আর আসবা না। অন্য এক ছাত্রী বলেন, টিপু স্যার কেন আমাদের এক ম্যাডামকে অপমান করেছে, তার বিরুদ্ধে আমরা বিচার দাবী করছি।

স্কুলের শিক্ষক কর্তৃক কলেজে তালাবদ্ধ করা এবং ছাত্রীদেরকে বের করে দেয়ার খবর ভোলায় ছড়িয়ে পড়লে একঝাক সাংবাদিক ঘটনাস্থলে যান। তখন কলেজ এর শিক্ষক-ছাত্রীদের বক্তব্য ভিডিও ধারন শেষে বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে গেলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক টিপু সুলতান সাংবাদিকদের বাঁধা প্রদান করেন। কেন ভিডিও ধারন করছেন এমন কথা বলে তিনি সাংবাদিকদের মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নেন এবং বিভিন্ন ভাবে হেনস্থা করার চেষ্টা চালান। শান্ত হয়ে এক পর্যায়ে তিনি সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা চালান। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয়ে সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্য দিতে বাধ্য হন।

এদিকে কবি মোজাম্মেল হক মহিলা কলেজের শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম জানান, কলেজ থেকে স্কুল আলাদা হওয়ার পর আমাদের একটু ঝামেলা যাচ্ছে। অধ্যক্ষ বা উপধ্যক্ষ কোন-টাই নেই। তাতে কলেজের ছাত্রীদের ভর্তি কার্যক্রম, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা তুলতে ঝামেলা হচ্ছে। কলেজে এসে দেখি টিপু স্যার তালা মেরে রেখেছেন।

তিনি আরো বলেন, সাবেক গভর্নিং বডির সদস্য মুকুল ভাই’র সাথে আমাদের এক শিক্ষকের কথা হয়, তখন তিনি বলেন, কলেজে কোন সমস্যা হবে না। আপনারা আসেন, ক্লাশ করেন। এসে দেখি কলেজে তালা মারা। মুকুল সাহেব অনেক কষ্ট করেছেন। তবে এ সমস্যা সমাধান অতিব জরুরি।

নানা বিষয়ে অভিযোগ সম্পর্কে হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ টিপু সুলতান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কলেজের মহিউদ্দিন স্যার অবসর গ্রহণ করার পর আমি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করি। গেল বছরের ২৩ মার্চ থেকে স্কুল ও কলেজ আলাদা করা হয়। এরপর কলেজে ২০-২৫জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ নেয়ার কথা। যখন দেখি বর্তমান কলেজ শিক্ষকরা বাণিজ্য করার চেষ্টায় আছে, তখনই আমি স্যার (সভাপতি) কে বলে নিয়োগ বন্ধ রাখি। এরপর থেকেই আমার বিরুদ্ধে নানা অপবাদ রটানো হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কলেজে তালা মারিনি, আমার স্কুলে আমি লাগিয়েছি। কলেজের শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত করার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। আর সাংবাদিকদের সাথে একটু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে, অন্য কিছু নয়।

কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি সাবেক সচিব এম মোকাম্মেল হক বলেন, শিক্ষকদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি হতেই পারে। কিন্তু কোন প্রতিষ্ঠান ক্ষতি হোক তা আমি কখনোই চাই না। আমি আগামী পরসু লোক পাঠাচ্ছি। কলেজ থেকেই সিনিয়র একজনকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিব, আপনারা আমাদেরকে সহযোগিতা করুন।

ফেসবুকে লাইক দিন

আর্কাইভ

মার্চ ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« ফেব্রুয়ারি    
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  

সর্বমোট ভিজিটর

counter
এই সাইটের কোন লেখা অনুমতি ছাড়া কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ!
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।