লোকজন ভয় পায় তাই চাকরি থেকে বাদ
অনলাইন ডেস্ক, আমাদের ভোলা.কম।
মানিকগঞ্জের গোলাটিয়া গ্রামটি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত। ওই গ্রামের শহিদুল হক খান পাশা ৪০ বছর ধরে অজ্ঞাত এক রোগে ভুগছেন। এ রোগের কারণে তার মুখ মণ্ডলসহ সমগ্র শরীলে ছোট বড় আলু আকৃতির টিউমারে ভরে গেছে। পুরো শরীরে এ অবস্থায় তাকে দেখলেই ভয় লাগে। এ অবস্থায় ২৫ বছর বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন তিনি। তাকে দেখলেই লোকজন ভয় পায় এ কারণে ছাটাই করা হয়েছে। দুই কন্যা সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে প্রতিবন্ধী। ছোট মেয়ের হাতে ও মুখেও উঠেছে বাবার মতো একই আকৃতির টিউমার।
সম্প্রতি শহিদুল হক খান পাশার বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, তার ভিটে বাড়ি থাকলেও কোনো ঘর নেই। তিনি তার এক প্রবাসী ভাইয়ের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন।
পাশা বলেন, আমার বয়স যখন ১০ বছর তখন হঠাৎ একদিন সারা শরীরে ঘামাচির মতো উঠে। বয়স বারার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো বড় হতে থাকে। একপর্যায়ে তা দেখতে ভয়ঙ্কর হয়ে যায়। আমাকে দেখলেই মানুষ ভয় পেতে শুরু করে। এমন অবস্থায় আমি যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম সেখান থেকে আমাকে ছাটাই করে দেয়া হয়। পরে আমার ভাই থাকার জন্য একটি ঘরে আশ্রয় দেন এবং মাসে কিছু টাকা দেন। সেই টাকাতেই কোনো রকম সংসার চালাচ্ছি।
পাঁচ ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড় পাশা। এসএসসি পাস করার পর অভাবের কারণে আর পড়ালেখা করতে পারেননি তিনি। সংসারের টানে প্রায় ২৫ বছর ২টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিংয়ে কাজ করেন তিনি।
পাশার দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে সুরাইয়া আক্তার স্বরণী প্রতিবন্ধী। প্রস্তুতি থাকলেও এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি তিনি। বয়স ২৫ বছর হলেও তার উচ্চতা আড়াই ফুট। বর্তমানে তিনি একটি টেইলার্সে কাজ শিখছেন।
পাশার স্ত্রী রশিদা আক্তার বলেন, আমার স্বামীর বাড়ি ভিটে আছে। কিন্তু আমাদের কোনো ঘর নেই। আমার এক দেবর একটি ঘরে আশ্রয় এবং মাসে ৭ হাজার টাকা দেয়। সেই টাকা দিয়ে ৪ জনের সংসার চলছে আমাদের। বিয়ের পর আমার স্বামীর কোনো চিকিৎসা করাতে পারিনি। বর্তমানে তার সারা শরীরে ছোট বড় অসংখ্য গোটায় ভরে গেছে। মানুষ দেখলে তাকে ভয় পায়।
তিনি বলে, আমার ছোট মেয়ে সাদিয়া আক্তার অর্নার দুই হাতে ও মুখে কয়েকটি গোটা উঠেছে। যদি এই মেয়েরও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার বাবার মতো হওয়ার আশঙ্কা করছি।
প্রতিবেশী কুদ্দুছ মিয়া বলেন, পাশার বর্তমান বয়স ৫১ বছর। প্রায় ২০ বছর ধরে পাশা তার ভাইয়ের বাড়িতে আছেন বিনা চিকিৎসায়। অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত পাশা শেষ বয়সে এবং তার ছোট মেয়ে চিকিৎসা পাবেন এমনটাই আশা করছেন তিনি।
পাশাকে একটি প্রতিবন্ধী ভাতা ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার কথা জানালেন মানিকগঞ্জ জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জোয়ারদার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত পাশাকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা শেষে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সমাজ সেবা হাসপাতালে পাঠানোর ব্যাবস্থা করা হবে।
মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. সাইফুর রহমান বলেন, আমার হাসপাতালে আসলে পাশাকে স্থানীয় ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা শেষে রোগ নির্ণয় করে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ কিংবা পিজি হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেব।
(সূত্র – জাগো নিউজ)