মসলিন

======
‌ক‌য়েক দি‌ন পূ‌র্বে আবার জানা গেল ঢাকাই মসলিনের পুনরুত্থান হ‌চ্ছে।

ক‌রোনা অ‌তিমারীর সব রকম দুসংবাদ ছা‌ড়ি‌য়ে একুশ সা‌লের শুরু‌তে এ রকম এক‌টি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ সক‌লের ম‌নে আশার সঞ্চার ক‌রে‌ছে নিশ্চয়ই। আমি নি‌জেও সংবাদ‌টি দে‌খে অ‌ভিভুত ও আপ্লুৎ এবং মনে করি ইংরেজি নববর্ষের শুরুতে সবচেয়ে চমকপ্রদ ও আশা জাগা‌নিয়া একটি খবর এ‌টি সকল বাঙা‌লিদের জন্য ।

এই মসলিনের সাথে বাঙলার যুগান্তকারী গৌরবোজ্জল অতীত আর লোকায়ত শিল্পের উৎকর্ষতার সমৃদ্ধতার ইতিহাস রয়ে‌ছে। রয়ে‌ছে বিশ্বব্যাপী বাঙা‌লি‌দের নন্দিত হওয়ার ই‌তিহাস, র‌য়ে‌ছে সম্ভাবনাময় বাঙলার উদ্ভাবন।

এটি এক‌টি স্রেফ কোন একটি শাড়ি নয় , এ‌টি বাঙলার গৌরব দৃপ্ত ও লোকজ কারু‌শি‌ল্পের উৎকৃষ্ঠতার নিদর্শন আর সক্ষমতার প্রতীক।

ঢাকাই মসলিন এত‌টাই মিহি কাপড় ছিল যে, এক‌টি দিয়াশলাইয়ের বাক্সের ভেতর একটি পুরো শাড়ি রাখা যেত। একটি আংটির ভেতর দিয়ে মসলিনের এক‌টিসেম্পূর্ণ শাড়ি বের করা যেত।

ইতিহাসে আছে, মুঘল আমলে তৈরি করা ঢাকাই মসলিন ঘাসের ওপর রাখলে এবং তার ওপর শিশির পড়লে কাপড় দেখাই যেত না। কয়েক গজ মসলিন কাপড় ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেয়া যেত বলে জনসাধারণ একে ‘হাওয়াই কাপড়’ বলত।

পলাশীর যুদ্ধের পর য়্যুরো‌পে শিল্প বিপ্লবের ফলে এবং ইংরেজদের উপ‌নি‌বে‌শিক শাসন ও চক্রান্তে মসলিন শিল্প প‌রিক‌ল্পিত ভা‌বে ধ্বংস করা হয়। এমন‌কি মসলিন যাতে বুনতে না পারে, এ জন্য ইংরেজরা কারিগরদের আঙুল পর্যন্ত কেটে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটি‌য়ে‌ছিল ব‌লে ক‌থিত আছে।

তখন নকশা করা মসলিনকে বলা হতো জামদানি। বর্তমানে নারীদের কাছে জামদানির খুব কদর। এমন নারী নেই, যার ঘরে একটি জামদানি শাড়িও নেই। তবে এই জামদানি মস‌লি‌নের অনেক পরিবর্তিত শাড়ী । আগের মসলিন জামদানির সাথে এর কোনো তুলনাই হয় না। অবশ্য এটা ঠিক, ঢাকাই জামদানিই মসলিনের ঐতিহ্য এখন বহন করে চ‌লে‌ছে। অ‌নেকটা দু‌ধের স্বাধ ঘো‌লে মেটা‌নো আর‌কি।

প্রকা‌শিত খব‌রে যা বলা হ‌য়ে‌ছে এবং মসলিন পুনরুত্থানের পেছনের ইতিহাসে যাহা পড়লাম , তা‌তে রীতি মতো রোমাঞ্চকর ম‌নে হ‌য়ে‌ছে।

ঢাকাই মসলিন পুনর্জন্মের খবরটিতে বলা হয়েছে, একদল গবেষক ছয় বছর ধরে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে বাংলার ঐতিহ্যরূপী মসলিন ফিরিয়ে এনেছেন।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ এবং কিছু উৎসা‌হি বিজ্ঞানী গবেষকের বিগত ছয় বছর ধরে অসাধারণ কর্মকান্ড চা‌লি‌য়ে‌ছেন যা সত্যিই অবাক করার মতো।

অভিবাদন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সকল গ‌বেষক ম‌হোদয়‌দের।

মসলিন কাপড় জোগাড় করতে কলকাতা থেকে লন্ডন পর্যন্ত তাদের ছুটতে হয়েছে। মুলত মসলিন বোনার সুতা ‘ফুটি কার্পাস’ তুলার গাছ থেকে তৈরি হয়। সেই গাছও খুঁজে বের করতে হয়েছে। খুজ‌তে খুজ‌তে সে জাত‌টি পাওয়া গে‌ছে গা‌জিপু‌রে।

ঢাকাই মসলিনের সর্বশেষ প্রদর্শনী হয়েছিল ১৮৫১ সালে লন্ডনে। এর ১৭০ বছর পর বাংলাদেশে আবার বোনা হলো ঐতিহ্যের ঢাকাই মসলিন শাড়ি।

আশা কর‌বো আমা‌দের সোনা‌লী আশ খ্যাত পাট কে নি‌য়েও বিজ্ঞানী ও গ‌বেষক ম‌হোদয়গণ আরো নুতন উদ্ভাবন কর‌বেন। ফি‌রি‌য়ে আন‌বেন পূ‌র্বের ঐ‌তির্য্য। প‌রি‌বেশ বান্ধব পণ্য বি‌শ্বের বাজা‌রে প্রচুর চা‌হিদা, তাই সে সম্ভাবনা‌কে কা‌জে লা‌গি‌য়ে পাট দি‌য়ে দে‌শে বিপ্লব সাধন কর‌বেন তাঁরা।

আমাদের পাট নিয়েও মস‌লি‌নের মত এমনটি হবার কথা । পাট নিয়ে সোনালী ভবিষ্যতের কথা অনেক দিন ধরেই শুনছিও। কিন্তু পা‌টের প‌লি‌থিন আবিস্কার করার পরও পলিথিনের ব্যাগকেও এখনো বাজার হ‌তে উঠানো সম্ভব হল না ।

আমা‌দের আখ শি‌ল্পেও বড় আকাল চল‌ছে। চল‌ছে ব্যাপক মন্দা। মান্ধাতা আমলের প্রযুক্তির কারণে এই শিল্পটা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। মানুষ ট্যাক্স দিয়ে বিদেশী চিনি খাচ্ছে আর কিছুদিন পর পর চিনিকল শ্রমিকরা পথে নামছে বেত‌নের দাবী‌তে চিনি কল শ্রমিকরাও মানবেতর অবস্থায় আসহায় আধা খে‌য়ে দিনা‌তিপাত কর‌ছে। এধরণের পরিস্থিতি উন্নয়নের সহায়ক ন‌হে।

আমারা য‌দি আমা‌দের ছোট ছোট শিল্প‌কে যথাযথ সহায়তার মাধ্য‌মে পুনরায় পু‌রো‌নো ঐ‌তি‌র্য্যে ফি‌রি‌য়ে নি‌তে পা‌রি তাহ‌লে আমা‌দের সা‌র্বিক উন্মতি গুলো জনসাধার‌ণের জন্য বেশি সাহায্য কর‌বে, সুনামও পুন প্র‌তি‌ষ্ঠিত হ‌বে ।

লেখক:
র‌ফিকুল ইসলাম সরকার (সুপ্তকূ‌ঁড়ি)
(ছড়াকার, কবি, কলা‌মিস্ট, উন্নয়ন কর্মী)

ফেসবুকে লাইক দিন

আর্কাইভ

ডিসেম্বর ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« নভেম্বর    
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  

সর্বমোট ভিজিটর

counter
এই সাইটের কোন লেখা অনুমতি ছাড়া কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ!
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।