ভোলায় হালিমা খাতুন গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
ইয়াছিনুল ঈমন, আমাদের ভোলা .কম ।
উত্তর ভোলার একমাত্র নারী বিদ্যাপিঠ হালিমা খাতুন গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরষ্কার বিতরনী এবং প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ভোলার কৃতি সন্তান বাংলাদেশের প্রখ্যাত সিএসপি অফিসার, সাবেক সচিব ও বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান এম মোকাম্মেল হক এর ৮১তম জন্মদিন পালিত হয়েছে। শনিবার (১৯ জানুয়ারী) ভোলা সদর উপজেলার পরাণগঞ্জের হালিমা খাতুন গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে জন্মদিনের কেক কাটা, দিনব্যাপি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরষ্কার বিতরন অনুষ্ঠিত হয়।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ টিপু সুলতানের সভাপতিত্বে এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সচিব এম মোকাম্মেল হক। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ঢাকাস্থ ভোলা সমিতির সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জাহাঙ্গীর, মেজর হাসান হাফিজুল হক রুমি, নাজিউর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ মাকসুদুর রহমান, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি মো: ফয়সাল, কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য মুজাহিদুল হক এমরান, রিজবীন রহমান মুকুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আহম্মদ, প্রধান শিক্ষক জামাল উদ্দিন বাহার প্রমূখ।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন, কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোঃ সফিকুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক আতিয়া নাসরিন। সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন, ক্রীড়া উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রভাষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম, সদস্য সচিব সহঃ শিক্ষক মোঃ ইব্রাহীম খলিল, সদস্য ও সহঃ শিক্ষক মোঃ সাইফুল ইসলাম, সহ: শিক্ষক ফিরোজ কবির, সহ:শিক্ষক নাছিমা শিরিন তুলি প্রমুখ। পরে প্রতিযোগীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ ও অতিথিদেরকে ক্রেস্ট দেওয়া হয়।
৮১তম জন্মদিনে এম মোকাম্মল হক মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে এই পৃথীবি থেকে সম্মান এবং সুস্থতার পাশাপাশি যেন একজন খাটি মুসলমান হিসেবে ঈমান নিয়ে যেতে পারেন এই কামনা করেন। প্রধান অতিথি এম মোকাম্মেল হক বলেন, তোমরা মায়ের জাত, মায়ের ধর্ম হচ্ছে ধারন করা এবং সন্তানকে মানুষ করে গড়ে তোলা। দুপায়ের মানুষ আর আসল মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠা অনেক পার্থক্য আছে। তোমরা মেয়েরা এগিয়ে যাবে, ভবিষ্যৎ তোমাদের হাতে। তোমাদের ছেলেমেয়রা ভালো হলে দেশ ভালো হবে। তোমরা তোমাদেরকে কখনো ছোট বলে ভাববে না। কারণ ভবিষ্যতে তোমরাই আসল মেধা। তোমরা দেখো আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন মহিলা, স্পীকার মহিলা। তিনি বলেন, আমার পিতা আলহাজ্ব কবি মোজাম্মেল হক যে যুগে জন্ম নিয়েছেন সে যুগে মুসলামনদের কোন শিক্ষাধিক্কা ছিলো না। তারা মুসলমান সমাজকে তুলতে চেয়েছেন। তাই আমার পিতা কবি মোজাম্মেল হক শিক্ষা বিস্তারের জন্য নিজ উদ্যোগে ১২টি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। আমাদের দ্বীপজেলা ভোলা একটি দেশের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন জেলা। এ জেলায় নারী শিক্ষা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। চিন্তা করেছি নারী শিক্ষার জন্য কিছু করা যায় কি না। সে চিন্তা থেকে আমি এখানে আমার মায়ের নামে মেয়েদের জন্য একটি স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার মান অনেক ভালো। উত্তর ভোলায় নারী শিক্ষায় হালিমা খাতুন গালর্স স্কুল এন্ড কলেজ অগ্রনী ভূমিকা পালন করছে।
আলোচনায় বক্তরা বলেন, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার আগে এই অঞ্চলের মেয়েদের পড়ালেখায় ব্যাপক অসুবিধা হত। নারীশিক্ষা বিস্তারের উদ্যোশেই ১৯৯৩ সালে তৎকালীন সচিব এক মোকাম্মেল হক এই বিদ্যাপিঠটি স্থাপন করেন। ২৬ বছরে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার ছাত্রী লেখাপড়া করে দেশের বিভিন্ন সেবায় নিয়োজিত আছে। এম মোকাম্মেল হকের পিতা মঙ্গলের কবি মোজাম্মেল হক ও অবহেলিত দ্বীপজেলা ভোলার শিক্ষা বিস্তারের জন্য ১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন। সুযোগ্য পিতার সুযোগ্য পুত্র এক মোকাম্মেল হক ১৯৫১ সালে তৎকালিন সময়ে ম্যাট্রিক ও ইন্টারমেডিয়েট সারাদেশে ২ম স্থান অধিকার করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএ সম্মান পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। তৎকালীন সিভিল ও ফরেন সার্ভিস পরীক্ষায় পাকিস্তানে প্রথম হন। তার প্রাপ্ত নাম্বারের রেকর্ড অবিভক্ত পাকিস্তানে কেউই ভাংতে পারেনি। কর্মজীবনে তিনি যে সকল সেক্টরে কাজ করেছেন সে সব সেক্টরেই তিনি সফল হয়েছেন। সেই কারনে একবার সাবেক রাষ্ট্রপতি জেনারেল এরশাদ এম মোকাম্মেল হকের কাজে সন্তুষ্ট হয়ে বলেছিলেন “মরুভুমিতে ফুল বাগান করার দায়িত্বও যদি মোকাম্মেল হককে দেওয়া হয় তবে সেখানেও তিনি সফল হবেন। এসময় বক্তারা শিক্ষার্থীদের এম মোকাম্মেল হকের মত হওয়ার স্বপ্ন দেখতে বলেন।
উপলক্ষ্যে, ১৯৩৭ সালের ১৯ জানুয়ারি ভোলা সদর উপজেলার পরান তালুকদার বাড়িতে জাতীয় মঙ্গলের কবি মোজাম্মেল হকের কনিষ্ঠ সন্তান এম মোকাম্মেল হক জন্মগ্রহণ করেন।