ভোলায় বাল্যবিবাহের হাত থেকে রক্ষা পেলো এসএসসি পরীক্ষার্থী
কাজী মহিবুল্লাহ আযাদ, আমাদের ভোলা.কম।
প্যান্ডেল সাজানো, রান্নাবান্নাসহ বিয়ের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। বাড়ি ভর্তি মেহমান। অপেক্ষা শুধু বরযাত্রী ও কাজী আসার। এরই মধ্যে বাধা হয়ে ধাড়ালেন কিশোরী কাবের সদস্যরা। ফোন দিলেন শিশু সহায়তায় ১০৯৮ হেল্প লাইন নম্বরে। সেখান থেকে খবর পেয়ে এসিল্যান্ড মোঃ কাওছার হোসেন এসে হাজির হলেন কনের বাড়িতে। তারই হস্তক্ষেপে বাল্যবিয়ের হাত থেকে রক্ষা পেল কিশোরী তৈয়বা খাতুন (১৫) নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থী।
সোমবার (২৮জানুয়ারি) দুপুরে ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের জামিরালতা গ্রামের ফরাজী বাড়িতে চলছিল এই বাল্যবিয়ের এমন আয়োজন। বর পার্শ্ববর্তী দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের মনজু (৩০)। পেশায় একজন মিষ্টি ব্যবসায়ী। এমন সময় খবর পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ কাওছার হোসেন ওই বাড়িতে গিয়ে বিয়ের সব প্রস্তুতি বন্ধ করে দেন। পরে ১৮ বছরের আগে বিয়ে দিবে না এই মর্মে মেয়ের পিতা-মাতার কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়।
জানা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নের মনেজা খাতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ও ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আইয়ুব আলী ফরাজীর মেয়ে তৈয়বা খাতুন এর সাথে দৌলতখানের চরপাতা ইউনিয়নের এক মনজু নামের এক মিষ্টি ব্যবসায়ীর সাথে বিবাহের আয়োজন চলছিলো। বিষয়টি জানতে পেরে কোস্ট ট্রাস্ট পরিচালিত ‘বেলি’ কিশোরী কাবের সদস্য- কণা, তামান্না, সোমা, বিবি আয়েশা প্রথমে তৈয়ব দের পরিবারকে বাল্য বিয়ের কুফল ও আইন সম্পর্কে বুঝায়। এতে তারা বিয়ে বন্ধ না করায় পরে শিশু সহায়তায় ১০৯৮ হেল্প লাইন আশ্রয় নেয় কিশোরীরা। পরে সেখান থেকে প্রশাসনকে জানালে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ কাওছার হোসেন ও সাংবাদিক আদিল হোসেন তপু ফরাজী বাড়িতে গিয়ে গায়ে হলুদের আয়োজন দেখতে পেয়ে তা ভেঙ্গে দিয়ে বাল্যবিয়ে বন্ধ করেন।
এসময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ কাওছার হোসেন তৈয়বা খাতুনের পিতা আইয়ুব আলী ফরাজীকে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে অবহিত করেন। আইয়ুব আলী সব শুনে তার ভুল বুঝতে পারেন এবং তার মেয়েকে পড়ালেখা করিয়ে উপযুক্ত বয়সে বিয়ে দিবেন বলে অঙ্গীকার করেন। পরে ১৮ বছরের আগে বিয়ে দিবে না এই মর্মে মেয়ের পিতা-মাতার কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়।
এসময় কোস্ট ট্রাস্ট এর আইইসিএম প্রকল্পের শিক্ষা অফিসার মোঃ সেলিম, উপজেলা ট্রেনিং এন্ড মনিটরিং অফিসার মোঃ মনিরুল ইসলাম, জবা কিশোরী কাবের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাল্যবিয়ে ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাংবাদিক আদিল হোসেন তপু বলেন, এসএসসি পরীক্ষার্থী তৈয়বা খাতুনের বাল্যবিয়ে খবর পেয়ে আমি প্রশাসন ও স্থানীয় ইউপি সদস্যকে জানাই। সেখানে গিয়ে মেয়ের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান দেখতে পাই। পরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ কাওছার হোসেনকে নিয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে বিয়ে বন্ধ করি। তৈয়বা খাতুনের পিতা আইয়ুব আলী মেয়েকে উপযুক্ত বয়স হলে বিয়ে দিবেন বলে অঙ্গীকার করেন।