ভোলার চরফ্যাসনে মুরগী চুরির অপবাদে কিশোরকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন
বিশেষ প্রতিনিধি, আমাদের ভোলা.কম।
চরফ্যাসনের হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নে মুরগি চুরির অপবাদে রুবেল (১৪) নামের এক কিশোরকে স্থানীয় ইউপি সদস্য আমজাদের নেতৃত্বে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৫ নভেম্বর নির্মম এই ঘটনা ঘটলেও নির্যাতনকারীদের হুমকী আর আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে ভিক্টিম পরিবার মামলা করতে পারেনি। নির্যাতনের নির্মমদৃশ্য ফেইজবুকে ভাইরাল হওয়ায় ঘটনার একমাসের বেশী সময় পর পুলিশ ভিক্টিমের মাকে ডেকে নিয়ে নির্যাতনের হোতা হাজারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আমজাদ হোসেনসহ ৬ জনকে আসামী করে শশীভূষণ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রবিবার এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
ভিক্টিম রুবেলের মা বিলকিছ বেগম জানান, রুবেল জেলে নৌকার বাবুর্চি।ঘটনার আগের দিন বনভোজন খাওয়ার জন্য রুবেলসহ বেশ কয়েকজন মুরগী কিনে আনেন। এই মুরগী চুরি করে আনা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন স্থানীয় মেম্বার। ১৫ নভেম্বর, ঘটনার দিন মুরগী চুরির অপবাদে স্থানীয় মেম্বার বাড়ি থেকে রুবেলকে ডেকে নিয়ে ৭ নং ওয়ার্ডের হাজারীগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে শ’খানেক গ্রামবাসীর সামনে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধর করে। রুবেলকে বাঁ পায়ের সাথে ডানহাত এবং ডান পায়ের সাথে বাঁ পা বেঁধে বদ্ধ হাত-পায়ের মাঝখানে মোটা লাকড়ির চলা ঢুকিয়ে পাছায় পেটানো হয়। একদিকে পেটানো হয়,অন্যদিকে টাকার জন্য রুবেলের মায়ের কাছে বার্তা পাঠানো হয়। রুবেলের মা স্থানীয় চেয়ারম্যান সেলিম হাওলাদারের কাছে ধর্ণা দিলে তিনি মেম্বারকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে নেয়ার কথা বলেন। নিরুপায় হয়ে দরিদ্র বিপদগ্রস্ত মা বিলকিছ বেগম নাকফুল আর গলার গহনা বন্ধক রেখে ৫ হাজার টাকা এনে মেম্বার আমাজাদ হোসেনকে দিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে নেন। ঘটনার পর অর্থাভাবে ছেলের চিকিৎসা যেমন করাতে পারেননি,তেমনি অর্থাভাবের পাশাপাশি মেম্বারের হুমকীর কারণে মামলাও করতে যাননি। কিন্ত ঘটনাটি ফেইজবুকে ভাইরাল হলে গত শনিবার শশীভূষণ থানা পুলিশ ভিক্টিমের মাকে থানায় ডেকে এনে মেম্বারসহ ৬ জনকে আসামী করে মামলা নেন। ঘটনার পর মেম্বারসহ অপরাপর আসামীরা পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ।
অভিযোগ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত মেম্বার জানান, চেয়ারম্যানের নির্দেশে আমি মুরগী চুরির কঠিন বিচার করেছি। বিচার করতে গেলে একটু আধটু মারধর করতেই হয়।
চেয়ারম্যান সেলিম হাওলাদার জানান, ঘটনা প্রসেঙ্গ তিনি কিছুই জানতেন না। নির্যাতনের পর রুবেলের মা তাকে বিষয়টি জানিয়ে।
শশীভূষণ থানার উপ-পরিদর্শক মামালার তদন্ত কর্মকর্তা পবিত্র কুমার জানান,এই ঘটানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।