পর্যটনের অপার সম্ভাবনা চর কুকরী মুকরি
আরিফ হোসেন লিটন, আমাদের ভোলা.কম।
ভোলার চর কুকরি মুকরি। নেই শহরের মতো কোলাহল, নেই যানবাহনের বিকট শব্দ, শুধু আছে মানুষের ভালোবাসা আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। নয়নাভিরাম নৈসর্গিক সৌন্দর্য ঘিরে এখানে গড়ে উঠতে পারে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম পর্যটন কেন্দ্র। যা থেকে সরকার আয় করতে পারে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। এর জন্য প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। কেননা এখানে রয়েছে কক্সবাজার, কুয়াকাটার মতো দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত ও গভীর অরণ্য, যা পর্যটক আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে এখানে থাকে পর্যটকদের উপছে পড়া ভিড়।
জানা গেছে, চরফ্যাশন উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে চর কুকরি মুকরির অবস্থান। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে জেগে ওঠা চরটি স্থানীয়রা ‘দ্বীপকন্যা’ নামে ডাকে। কুকরিমুকরি ইউনিয়নটি বাবুগঞ্জ, নবীনগর, রসূলপুর, আমিনপুর, শাহবাজপুর, মুসলিমপাড়া, চর পাতিলা ও শরীফপাড়া নিয়ে গঠিত। এখানকার ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, বন্যপ্রাণী আর সমুদ্র সৈকত ঘিরে সৌন্দর্যের এক বর্ণিল উপস্থিতি প্রকৃতি প্রেমী আর পর্যটকদের হাতছানি দেয়। ওলন্দাজ-পর্তুগিজদের অভয়ারণ্য বলে পরিচিত চর কুকরি মুকরিতে প্রায়ই দেশি-বিদেশি পর্যটক আর ভ্রমণপিপাসুদের সমাগম হয়। এ বনে রয়েছে ১৫ হাজারেরও বেশি হরিণ। এ ছাড়া রয়েছে অতিথি পাখি, লাল কাঁকড়া, বুনো মহিষ, বানর, বনবিড়াল, উদবিড়াল, শেয়াল, বনমোরগসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী। এদিকে আইইউসিএন চর কুকরি মুকরিকে বিশ্ব জীববৈচিত্র্যের নিরাপদ স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এখানকার ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের প্রায় ২০ কিমি. এলাকা যেন আরেক সুন্দরবন।
জানা যায়, প্রায় ৮০০ বছরের পুরনো এই স্বপ্নের দ্বীপ কুকরি মুকরি বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চল তথা সর্বাঞ্চলের কাছে অতি পরিচিত নাম। স্বপ্নের দ্বীপ কুকরি মুকরির ইতিহাস বেশ প্রাচীন। ৭০০ বছর আগে এখানে ও মনপুরায় পর্তুগিজ জলদস্যুদের আস্তানা ছিল। কিন্তু কোনো একসময় এই চরটি পানির তলে হারিয়ে যায়। পরে ১৯১২ সালে এই চরটি আবার জেগে ওঠে। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার কুকরি মুকরি চরে বন সম্প্রসারণ অধিদফতরকে বনায়ন করার নির্দেশ দিলে ১৯৭৩ সালে বনায়ন শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৯ সালের ১৪ মে বন বিভাগের কাছে এক (সর্বশেষ সংশোধিত) প্রজ্ঞাপনে লিখিত নির্দেশনা আসে। উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জান-মাল রক্ষায় ভোলায় কমপক্ষে তিন লাখ ৬০ হাজার একর জমিতে সংরক্ষিত শ্বাসমূলীয় (ম্যানগ্রোভ) বনায়ন করতে হবে। এ সময় মূলত শ্বাসমূলীয় গাছের চারা রোপণ করে বনায়ন শুরু করা হলেও পরে ক্রমে ক্রমে যুক্ত হয় সুন্দরী, গেওয়া, পশুর প্রভৃতি গাছের চারা রোপণ।
দ্বীপ কুকরি মুকরি শীতকালের চিত্র ভিন্ন ধরনের। বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে ওঠে এসব অঞ্চলের চারপাশ। সুদূর সাইবেরিয়া থেকে ছুটে আসা অতিথি পাখিদের আগমনে চরাঞ্চলগুলো যেন নতুন রূপ ধারণ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শীত মৌসুমে বাংলাদেশে প্রায় ১৫০ প্রজাতির অতিথি পাখি আসে। এর মধ্যে বেশির ভাগই ভোলায় অবস্থান করে। তখন স্বপ্নের দ্বীপ কুকরি মুকরি অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়।
চর কুকরি মুকরির ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বলেন, পর্যটকদের জন্য ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে রেস্ট হাউস প্রতিষ্ঠা করেছেন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি। গত বছরের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ খান উদ্বোধন করেছেন এবং সপরিবারে রাত যাপন করেছেন।
ইউএনও রুহুল আমিন বলেন, পর্যটক এলাকায় প্রশাসনিকভাবে রয়েছে নিরাপত্তার ব্যবস্থা। পর্যটকদের কোনো সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ প্রশাসন অবগত হলে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা রয়েছে।
উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি বলেন, আমি চরফ্যাশনকে রাজধানী বানাতে পারব না। তবে চরফ্যাশনে এমন উন্নয়ন করা হয়েছে যা রাজধানীর মানুষ চরফ্যাশনে এসে দেখবে। বিশেষ করে পর্যটন এলাকা বিছিন্ন দ্বীপ ‘কুকরি মুকরি’ অন্যতম।